ধৈর্য্য কিংবা সবরের মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল পরিবেশ পরিস্থিতি সবরের সঙ্গে মোকাবিলা করেতেন।
উগ্রতা, হিংস্রতা ও ক্রোধ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মধ্যমপন্থাই হলো- সাফল্য লাভের একমাত্র চাবিকাঠি। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো। ’ -সূরা বাকারা: ১৪৩
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আথিতেয়তা ও উদারতার জন্য মুসলমানেরা প্রশংসিত। মুসলমানেরা মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী। মুসলমানদের নিকট পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর লোকজন নিরাপদ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহবা এবং হাত থেকে সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে। ’ –সহিহ বোখারি
উগ্রপন্থা কিংবা চরমপন্থা হলো- শয়তানের পথ। নিজেদেরকে ধ্বংসের হাত থেতে রক্ষা করতে হলে চরমপন্থা পরিহার করতে হবে। শয়তান সব সময় মানুষকে মন্দ কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। শয়তানের অনুসারীরা মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লাগানোর জন্য চেষ্টা করে। তাই মানুষরূপী শয়তান সম্পর্কে মুমিনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শক্র। ’ -সূরা বাকারা: ২০৮
বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। অনেকই ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্য এসবের বিচার বিশ্লেষণ করছে না। দুর্বলের ওপর সবলের নির্যাতন হামলা-মামলা, অত্যাচার ও শোষণ জুলুম চলছে।
এমতাবস্থায় মুসলমানদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর নিকট থেকে শুরুতেই শয়তান মানুষের মনের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেওয়ার ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছিলো। মুসলমানের ঈমান আকিদা ঐতিহ্য ধ্বংস করতে শয়তান সদা সর্বদা তৎপর রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তৎপর থাকবে। ফলে কিছু সংখ্যক যুবক শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। যা ইসলাম ও মুসলমানের জন্য আশঙ্কার বিষয়।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেনো তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। ’ -সূরা মুনাফিকুন: ০৯
বস্তুত দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ভোগ-বিলাস, হিংসা-নিন্দা ইত্যাদি পরিহার করে চলতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও মধ্যমপন্থার অনুসরণ করতে হতে হবে।
কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! কোনো সম্প্রদায় যেনো অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আরও কোনো নারীও যেনো অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। ’ -সূরা হুজরাত: ১১
হালে পৃথিবীর অনেক জায়গায় মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছেন। আমাদের প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানরা কি পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তাদের বিষযে দেশের সরকার ও জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মধ্যমপন্থার অনুসরণ করতে হবে। সমকালীন সঙ্কট মোকাবিলায় মধ্যমপন্থা হিসেবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। যেমনটি কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, যদি মুমিন হয়ে থাকো তবে বিজয় তোমাদের হবেই। ’ -সূরা আলে ইমরান: ১৩৯
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ৮ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/