এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। ’ -আবু দাউদ ও তিরমিজি
জ্ঞানীরা বলেন, উত্তম চরিত্র হচ্ছে- ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন।
ইসলাম মানুষের চরিত্র গঠনে যেমন গুরুত্বারোপ করেছে, তার নজির বিরল। একজন মুসলমানের ওপর তার আচার-আচরণে আল্লাহর সঙ্গে, নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে, অন্য মানুষের সঙ্গে, এমনকি নিজের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা উচিত ইসলাম তার এক অভিনব চকমপ্রদ চিত্র অঙ্কন করে দিয়েছে।
যখন একজন মুসলমান বাস্তবে ও তার লেনদেনে ইসলামি চরিত্রের অনুসরণ করে তখনই সে অভীষ্ট পরিপূর্ণতার অতি নিকটে পৌঁছে যায়, যা তাকে আরও বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও উচ্চমর্যাদার সোপানে উন্নীত হতে সহযোগিতা করে।
পক্ষান্তরে, যখনই একজন মুসলমান ইসলামের চরিত্র ও শিষ্টাচার হতে দূরে সরে যায় সে বাস্তবে ইসলামের প্রকৃত প্রাণচাঞ্চল্য, নিয়মনীতির ভিত্তি হতে দূরে সরে যায়। সে যান্ত্রিক মানুষের মতো হয়ে যায়, যার কোনো অনুভূতি এবং আত্মা নেই।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মুমিন বান্দারা উন্নত চরিত্রের দ্বারা সারা রাত নামাজ আদায়কারী এবং সারা বছর রোজা পালনকারীর মর্যাদায় অতি সহজে পৌঁছে যেতে পারে। -আবু দাউদ
আমরা জানি, দয়া, ক্ষমা, সবর, বিনয়, সৎ স্বভাব, সুন্দর আচরণ মানবচরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই বলা হয়, তাই উত্তম চরিত্রবানই উত্তম ঈমানদার।
উত্তম চরিত্র বা আখলাক তিন প্রকার
১. আখলাকে হাসানা : কেউ জুলুম করলে সমপরিমাণ বদলা নেওয়ার আখলাক।
২. আখলাকে কারিমা : আখলাকে কারিমা হচ্ছে জুলুম করলে তা মাফ করে দেওয়া।
৩. আখলাকে আমিমা : জালেমের জুলুম মাফ করে দেওয়ার পর তার প্রতি ইহসান বা উপকার করা।
উত্তম চরিত্রবান আল্লাহর সন্তুষ্টির বাসনায় রাগ গিলে ফেলে, সৎ কর্মশীল লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে, মানুষের সঙ্গে কটুবাক্য ব্যবহার করে না।
একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বলেন-
মুসলিম সর্বদা সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কখনও বলবে না। সে হবে সাহসী, কাপুরুষতাকে ঘৃণা করবে।
সে কখনও প্রতারণার আশ্রয় নেবে না। সে হবে বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন। সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাসাধ্য পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করবে।
মুমিন কারও অগোচরে তার সমালোচনা করবে না বা কারও সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করবে না। ন্যায়ের পক্ষে সে অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দেবে। সত্য এবং বাস্তব ব্যাপারে দ্বিধাহীনভাবে নিঃসঙ্কোচে কথা বলবে।
সে হবে ন্যায়-নিষ্ঠাবান, যদিও এতে তার ক্ষতি হয় বা তার বিপক্ষে যায়। সে অন্যের অধিকারে কখনও হস্তক্ষেপ করবে না। কেউ তার প্রতি অন্যায় করুক তাও সে কখনও বরদাশত করবে না।
মুসলিম ব্যক্তি সব কাজে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ নেবে। আর কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে সিদ্ধান্তে অবিচল থাকবে।
সে হবে বিনয়ী এবং দয়ালু। ভালো এবং জনকল্যাণমূলক কাজ নিজে করবে এবং অন্যকে তা করার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে এবং অন্যকে তা থেকে নিষেধ করবে।
সে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। আর মুসলিম নারী ইসলামি অনুশাসনমতে পর্দা রক্ষা করে চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, ১২ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/