ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

সোয়া দুশ’ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদে

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
সোয়া দুশ’ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদে সোয়া দুশ’ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দিনাজপুর: নয়াবাদ মসজিদের অবস্থান দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে। জেলা সদর থেকে ২০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে। ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সোয়া দুশ’ বছরের পুরনো এ মসজিদ বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত স্থাপনা।

মসজিদের প্রবেশদ্বারের উপরে ফারসি ভাষায় উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এর সময়ে ১১০৭ হিজরিতে (১৭৯৩ খ্রি.) মসজিদটি নির্মিত হয়।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, আঠারো শতকের মধ্যভাগে যখন বিখ্যাত কান্তনগর মন্দির নির্মিত হয়, তখন মধ্যপ্রাচ্য (খুব সম্ভবত মিশর) থেকে আসা মুসলমান স্থাপত্যকর্মীরা পার্শ্ববর্তী নয়াবাদ গ্রামে মোকাম তৈরি করেন এবং সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।


নয়াবাদ মসজিদের তিন গম্বুজ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমআয়তাকার মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর চারকোণায় রয়েছে চারটি অষ্টভূজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ১ দশমিক ১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলান। মাঝের খিলানের উচ্চতা ১ দশমিক ৯৫ মিটার, প্রস্থ ১ দশমিক ১৫ মিটার। পাশের খিলানদ্বয় সমমাপের এবং অপেক্ষাকৃত ছোট।

উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলান বহু খাঁজযুক্ত। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবের উচ্চতা ২ দশমিক ৩০ মিটার এবং প্রস্থ ১ দশমিক ০৮ মিটার। দু’পাশের মিহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট।
নয়াবাদ মসজিদের সামনের অংশ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসমস্ত দেয়াল জুড়ে আয়তাকার বহু  পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। পোড়ামাটির নকশাগুলো বহু জায়গায় খুলে পড়েছে। ফলকগুলোর আয়তন ০ দশমিক ৪০ মি × ০ দশমিক ৩০ মি। ফলকগুলোর মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে। একটিতে জোড়া ময়ূরের প্রতিকৃতিও রয়েছে। এরূপ মোট ১০৪টি আয়তাকার ফলক রয়েছে। তবে ফলকের মধ্যে অলংকরণের অনেকটাই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে মসজিদে কিছু সংস্কার কাজ হয়েছে। চারপাশে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বসার স্থান। রাতের আঁধারে আলোকসজ্জার জন্য মসজিদ এলাকায় পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রংপুর শহরের পালপাড়া এলাকা থেকে মসজিদ দেখতে আসা মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কান্তজিউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ দেখলাম। এতো সুন্দর করে দু’টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। ভবিষ্যতে এখানে আবারো ঘুরতে আসবো।
বহু খাঁজযুক্ত খিলান/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমনেয়াজ অরফে কালুয়া মিস্ত্রির বংশধর ও নয়াবাদ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, প্রাচীনতম এ নয়াবাদ মসজিদ অত্র অঞ্চলের ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করছে। বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সারা বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।

যেভাবে যাবেন
কান্তজিউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। এখানে যাতায়াত করা খুবই সহজ। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও প্লেন যোগে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন কি খাবেন
এখানে একটি সরকারি রেস্ট হাউজ ও পর্যটন মোটেলের একটি শাখা রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। অত্র এলাকার আশপাশে ছোট-বড় বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
ওএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।