মসজিদের প্রবেশদ্বারের উপরে ফারসি ভাষায় উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এর সময়ে ১১০৭ হিজরিতে (১৭৯৩ খ্রি.) মসজিদটি নির্মিত হয়।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, আঠারো শতকের মধ্যভাগে যখন বিখ্যাত কান্তনগর মন্দির নির্মিত হয়, তখন মধ্যপ্রাচ্য (খুব সম্ভবত মিশর) থেকে আসা মুসলমান স্থাপত্যকর্মীরা পার্শ্ববর্তী নয়াবাদ গ্রামে মোকাম তৈরি করেন এবং সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
আয়তাকার মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর চারকোণায় রয়েছে চারটি অষ্টভূজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ১ দশমিক ১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে তিনটি খিলান। মাঝের খিলানের উচ্চতা ১ দশমিক ৯৫ মিটার, প্রস্থ ১ দশমিক ১৫ মিটার। পাশের খিলানদ্বয় সমমাপের এবং অপেক্ষাকৃত ছোট।
উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলান বহু খাঁজযুক্ত। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবের উচ্চতা ২ দশমিক ৩০ মিটার এবং প্রস্থ ১ দশমিক ০৮ মিটার। দু’পাশের মিহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট।
সমস্ত দেয়াল জুড়ে আয়তাকার বহু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। পোড়ামাটির নকশাগুলো বহু জায়গায় খুলে পড়েছে। ফলকগুলোর আয়তন ০ দশমিক ৪০ মি × ০ দশমিক ৩০ মি। ফলকগুলোর মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে। একটিতে জোড়া ময়ূরের প্রতিকৃতিও রয়েছে। এরূপ মোট ১০৪টি আয়তাকার ফলক রয়েছে। তবে ফলকের মধ্যে অলংকরণের অনেকটাই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে মসজিদে কিছু সংস্কার কাজ হয়েছে। চারপাশে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বসার স্থান। রাতের আঁধারে আলোকসজ্জার জন্য মসজিদ এলাকায় পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রংপুর শহরের পালপাড়া এলাকা থেকে মসজিদ দেখতে আসা মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কান্তজিউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ দেখলাম। এতো সুন্দর করে দু’টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। ভবিষ্যতে এখানে আবারো ঘুরতে আসবো।
নেয়াজ অরফে কালুয়া মিস্ত্রির বংশধর ও নয়াবাদ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, প্রাচীনতম এ নয়াবাদ মসজিদ অত্র অঞ্চলের ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করছে। বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সারা বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।
যেভাবে যাবেন
কান্তজিউ মন্দির ও নয়াবাদ মসজিদ পাশাপাশি অবস্থিত। এখানে যাতায়াত করা খুবই সহজ। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও প্লেন যোগে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন কি খাবেন
এখানে একটি সরকারি রেস্ট হাউজ ও পর্যটন মোটেলের একটি শাখা রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। অত্র এলাকার আশপাশে ছোট-বড় বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
ওএইচ/জেডএম