বিষয়টি বিশ্ব মিডিয়ার নজর এড়ায়নি। বাংলাদেশের এমন পদক্ষেপ প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বের সর্বত্র।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে সাড়ে সাত লাখ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।
নতুন রোহিঙ্গা ঢলে বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে রাখাইনের সেনা অভিযান জোরদারের পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, জানিয়েছে আইওএম।
শরণার্থী প্রবেশ অব্যাহত থাকায় তাদের জন্য আরও মানবিক সহায়তার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে তারা বলছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আসা অব্যাহত থাকায় সেখানে জরুরি মানবিক সহায়তার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি আর স্যানিটেশনের অভাবে শরণার্থী শিবিরগুলোতে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।
এদিকে নতুন রোহিঙ্গা ঢলে আসাদের মধ্যে গর্ভবতী নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাতৃত্ব, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যে ঝুঁকির আভাস দিয়েছে আইওএম।
আইওএমর সিনিয়র আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্যাট্রিক ডিগান হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, স্বল্প স্থানে অতিরিক্ত লোক গাদাগাদি করে বসবাস করায় এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। নতুন করে আসা শরণার্থীদের মধ্যে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর সংখ্যা অধিক। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব রয়েছে। ফলে মাতৃত্ব, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যে ঝুঁকি রয়েছে।
ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়, খাদ্য, পানি, স্যানিটেশন এবং অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী সামগ্রীর জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বসে নেই বাংলাদেশের মানুষও। তারাও বিপন্ন মানবতার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর দায়ভার সারাজীবন বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষও যে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান আর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত, সে কথাও উঠে এসেছে সেই প্রতিবেদনে।
তবে সেই প্রতিবেদনে জোর দিয়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মানবিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম থেকে মসজিদ কিংবা স্কুল... বাংলাদেশের মানুষ ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সাধ্যের সবটুকু দিয়ে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য নগদ টাকা থেকে খাবার-মোমবাতি-পোশাক সবই সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
যার যা সামর্থ্য তাই দিয়ে পৃথিবীর সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মানুষকে সহায়তার চেষ্টা করছে তারা।
বস্তুত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবধর্ম। এই পুণ্যময় কাজ সর্বোত্তম ইবাদত।
ইসলাম মনে করে, অসহায়-নির্যাতিত মানুষের দুর্দিনে সাহায্য, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মন-মানসিকতা যাদের নেই তাদের ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
পবিত্র কোরআনে সাহায্য প্রার্থীদের উপকারে কল্যাণ রয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কোরআনের অনেক জায়গায় আল্লহতায়ালা তার সৃষ্টিজগতের ওপর সমানভাবে দয়া প্রদর্শন করতে বলেছেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতসমূহ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে। ’ –সহিহ মুসলিম
হাদিসে নবী করিম (স) মুসলমানের ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা ঘোষণা করে বলেছেন, ‘একজন মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সীলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন। ’ –সুনানে আবু দাউদ
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/