মানুষের শরীরের জন্য যেমন বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও ভিটামিন জরুরি তেমনি তার আত্মার জন্যও বিনোদন, বিশ্রাম ও খাদ্য জরুরি। আনন্দ ও চিত্ত বিনোদন মানুষের মধ্যে হতাশা ও ব্যর্থতার গ্লানিসহ অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতিকে মন থেকে মুছে দেয়।
আনন্দ ও চিত্ত বিনোদন মানুষকে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে এবং এ সবের সহায়তায় পার্থিব বিষয়ে বেশি সাফল্য পাওয়া যায়। এখনতো মনোবিজ্ঞানীরাও মানুষের সুস্থতার জন্য আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ইসলামি স্কলাররা মনে করেন, শুধুমাত্র ধর্মীয় ও নৈতিক জীবন যাপনের মধ্যেই রয়েছে আনন্দ। পবিত্র ইসলাম ধর্ম মানুষের শারীরীক ও আত্মিক সমস্ত চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেয়। ইসলাম মনে করে, একটি সফল জীবনের জন্য প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা থাকা জরুরী। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে সুখ বা আনন্দ শব্দটি প্রায় ২৫ বার এসেছে। যারা মানুষের জন্য আনন্দ ও সুখের ব্যবস্থা করেন, পবিত্র কোরআন তাদের প্রশংসা করে এবং তারা পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলাম মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে আনন্দ উপভোগের দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সুস্থ বিনোদন, নিষ্কলুষ আমোদ-প্রমোদ মানুষকে সুস্থ আনন্দ দেয়। ভ্রমণের মাধ্যমে সুন্দর দৃশ্য দেখা বা জ্ঞান অর্জন করা সুস্থ বিনোদনের আরেকটি মাধ্যম। ভ্রমণের ফলে মানুষের মনে জমে থাকা অবসাদ, একঘেয়েমি, ক্লান্তি দূর হয় এবং মন সতেজ ও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।
শরীর-চর্চা ও খেলাধুলাও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়াও আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। তবে উৎসবের নামে বাড়াবাড়ি, অপচয় অর্থহীন কর্মকান্ড ও অপসংস্কৃতি বা অনাচারে জড়িয়ে পড়া নিষিদ্ধ।
তবে হ্যাঁ, প্রশ্ন উঠতে পারে। জীবন চলার পথে নানাবিধ সঙ্কট, সমস্যা, অভাব-অনটন ও দুঃখ-কষ্টে হয়তো আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে করণীয় কী?
ইসলাম এ বিষয়ে সুন্দর সমাধান দিয়েছে। ইসলাম মনে করে, অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি মানুষের আত্মাকে শক্তিশালী করবে। এতে মানুষের পাপ মাফ হয়। ইসলাম বলে, বিষন্ন হওয়া চলবে না। কারণ, বিষন্নতা মানুষের ইচ্ছা শক্তিকে দুর্বল করে দেয়।
এক কথায়, মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য সুস্থ মন, মনের শান্তি ও সুখবোধ থাকতে হবে। এই সুখবোধই আপনাকে দেবে উচ্ছ্বল ও প্রাণবন্ত জীবন। যে জীবনের অধিকারী হলে আপনি সব কাজে আলাদা প্রশান্তি অনুভব করবেন। ইবাদত-বন্দেগির স্বাদ অনুভব করতে পারবেন। এ জন্য দরকার আল্লাহর ওপর ভরসা।
আল্লাহর ওপর ভরসা কেমন হবে, সে সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, একবার এক বেদুইন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এলেন। নবী করিম (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাহন উট কোথায় রেখেছো? বেদুইন সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মসজিদের বাইরে খোলা অবস্থায় রেখেছি। আমি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করেছি। আল্লাহতায়ালাই দেখবেন আমার উট। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, আগে তোমার উটের পা বাঁধো, তারপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো।
সুতরাং যতোই বিপদ আসুক মনোবল হারানো চলবে না। আশাবাদী হতে হবে, আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার ধৈর্যশীলতা, পরিশ্রম ও সময়কে কাজে লাগানোর অভ্যাস।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭
এমএইউ/