এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘একজন মানুষের জীবন বাঁচানো যেমন গোটা মানব জাতির জীবন বাঁচানোর সমতুল্য, ঠিক তেমনি কোনো মানুষের জীবন সংহার করা গোটা মানব জাতিকে ধ্বংস করার সমতুল্য। ’ -সূরা আল মায়িদা: ৩২
হত্যা কতটা মন্দ, গর্হিত, বিবেক বর্জিত ও জঘন্য।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় অপরাধীকে তার অপরাধ সদৃশ শাস্তি প্রদানকে কিসাস বলা হয়। যেমন হত্যার বদলায় হত্যা করা, জখমের বদলায় জখম করা। কিসাস সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, ‘হে মুমিগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের পরিবর্তে ক্রীতদাস, এবং নারীর পরিবর্তে নারী। (নিহত ব্যক্তির) তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা করে দেওয়া হলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করা ও সততার সঙ্গে তার দিয়ত (ক্ষতিপূরণ) আদায় করা বিধেয়। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও রহমত বিশেষ। -সূরা আল বাকারা: ১৭৮
ইসলামি আইনে হত্যার বদলা হিসাবে হত্যার বিধান নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদের ওপর ন্যাস্ত। ইসলামি আইনে কেবল কেসাস বা অনুরূপ শাস্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে। ইসলামি আইনে ক্ষমা করার অধিকার নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে দেওয়া হয়েছে। যা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, অনেক দেশের প্রচলিত আইনেও এটা সিদ্ধ।
ইসলামের এমন বিধানবলে এক মুসলিম পিতা ক্ষমা করে দিলেন ছেলের খুনিকে। সম্প্রতি আমেরিকার কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লেক্সিংটন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে।
সিএনএন’এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আড়াই বছর আগের একটি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছিল। আদালত মামলার একমাত্র আসামিকে সাজাও দেন ৩১ বছরের কারাদণ্ড। সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিহত ছেলের বাবা হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিলেন। আর বুকে জড়িয়ে নিলেন ছেলের হত্যাকারীকে। আবেগে কেঁদেই ফেলেন ওই যুবক। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) এই ঘটনা ঘটে।
২০১৫ সালের এপ্রিলে সালাহউদ্দিন জিতমোউদকে (Salahuddin Jitmoud) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সালাহউদ্দিন কেন্টাকির লেক্সিংটন এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে পিৎজা দিতে গিয়েছিলেন। পরে অ্যাপার্টমেন্টের পাশের খালি জায়গা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি পিৎজা সরবরাহকারী গাড়ির চালক ছিলেন।
এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়। তবে আদালত কেবল রেলফোর্ডকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
মামলার রায়ের পর নিহতের বাবা ড. আবদুল মুনিম সোমবাত জিতমোউদ (Abdul Mumin Sombat Jitmoud) আসামি ট্রে আলেক্সজান্ডার রেলফোর্ড (Trey Alexander Relford) ক্ষমা করে দেন।
ড. আবদুল মুনিম বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শ থেকেই তিনি এই কাজ করেছেন। যার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে তিনি যদি তাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে আল্লাহও তাকে ক্ষমা করেন না।
আদালত রেফলোর্ডকে হত্যা ও ডাকাতির দায়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেন। আবদুল মুনিম বলেন, সালাহউদ্দিন ও তার মায়ের পক্ষ থেকে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি জানান, ‘এই দুই বছর সাত মাস আমাদের জন্য অনেক খারাপ সময় গেছে। যাই হোক, তা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসে এবং এর ওপর আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। ’
ক্ষমার ঘোষণার প্রেক্ষিতে রেলফোর্ড বলেন, ‘আমার আসলে বলার কিছুই নেই। ওই দিন যা হয়েছে তার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। আপনার ছেলেকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কিন্তু আপনি যেটা করলেন, সেটা অভাবনীয়। ’
আবদুল মুনিম বলেন, ‘আমি এই অন্যায় কাজের জন্য ক্ষুব্ধ। যারা তোমাকে (রেলফোর্ড) ভুল পথে পরিচালিত করেছে। যেজন্য তুমি এই মারাত্মক অপরাধ করেছ। তবে আমি তোমাকে দোষ দেই না। তুমি আজ থেকে নতুন জীবন পেলে। আমি আশা করবো, তুমি সুন্দর জীবনের অধিকারী হবে। ভালো পথে চলবে। ’
-সিএনএন অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমএইউ/