ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

২০১৮ সালে হজের সরকারি কোটায় প্রাক-নিবন্ধনের সুযোগ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
২০১৮ সালে হজের সরকারি কোটায় প্রাক-নিবন্ধনের সুযোগ ২০১৮ সালে হজের সরকারি কোটায় প্রাক-নিবন্ধনের সুযোগ

বাংলাদেশি হজযাত্রীদের এক সময় হজপালন ছিলো বেশ সহজসাধ্য বিষয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

বিগত বছর থেকে হজযাত্রীদের অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি চালু করার পর থেকে শুরু হয়েছে অপেক্ষার পালা। এখন একজন হজযাত্রীকে হজের নিয়ত করার পর মোটামুটি বছর খানেক অপেক্ষা করতে হয় হজপালনের জন্য।

ধারণা করা হচ্ছে, অপেক্ষার পালা দিন দিন বাড়বে।  

ইতিমধ্যে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের বেসরকারি কোটার প্রাক-নিবন্ধন শেষ হয়েছে। এখন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা প্রাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ-২) স্বাক্ষরিত জনস্বার্থে প্রকাশিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ৯ নভেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৮ সালে হজ গমনেচ্ছু সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে জানানো যাচ্ছে যে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে; যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০১৮ সালের হজের প্রাক-নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধনের কোটা ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়েছে।

তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার ১০ হাজার হজযাত্রীর কোটা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন হজ সংশ্লিষ্টরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ১৫৭ হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর বিপরিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৩ জন।  

হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের মতে, ঠিকমতো সেবা না দেওয়ার কারণে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে ব্যালটি ব্যবস্থাপনার প্রতি দিন দিন মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। এতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে।  

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের যেসব সেবা প্রদান করা হয়, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সুবিধাসমূহের মাঝে রয়েছে-

ক. যথাসময়ে ভিসা এবং বিমান টিকেটে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।  

খ. নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গমন, সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং মদিনা শরিফে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ব্যবস্থাসহ যথাসময়ে মদিনায় গমন।

গ. মিনায় জামারার (পাথর নিক্ষেপের স্থান) নিকটবর্তী স্থান এবং আরাফায় মসজিদের নামিরার (যে মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়) অতি নিকটবর্তী স্থানে তাঁবুতে অবস্থান।
 
ঘ. মেট্টোরেল বা উন্নতমানের বাসে মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় যাতায়াতসহ প্রশিক্ষিত গাইডের অধীনে হজ পালনে সহায়তা প্রদান।
 
ঙ. এ-প্যাকেজের হাজিদের হারাম শরিফ হতে ৫০০ থেকে ১ হাজার মিটারের মধ্যে, বি-প্যাকেজের হাজিদের ১ হাজার থেকে ২ হাজার মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মসজিদে নববীর নিকটবর্তী উন্নতমানের হোটেল বা বাড়িতে অবস্থানের ব্যবস্থা।
 
চ. মক্কা এবং মদিনায় এক হোটেল বা বাড়িতে অবস্থানের সুযোগ।

ছ. অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা সম্বলিত সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় চিকিৎসা-সেবা প্রদান।

জ. হজের পুস্তিকা, গাইড, নির্দেশিকা, লিফলেট ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ।  
 
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সৌদি আরব বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য কোটা আর বাড়াবে না। পূর্ব কোটা অনুযায়ী ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৫৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনায় আর বাকি এক লাখ ১৭ হাজার ১৫৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। এক্ষেত্রে কোটার অতিরিক্ত হজযাত্রীরা ২০১৯ সালের হজের জন্য অপেক্ষমান থাকবেন।

২০১৭ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার হজযাত্রীর সব কোটা পূরণ না হলে- বাকি কোটা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর বাকি কোটা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দের সম্ভাবনা খুবই কম।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন জানিয়েছেন, সরকারি কোটা এবার পূরণ না হলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছাড়া হবে না। প্রয়োজনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কম সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানো হবে।

২০১৮ সালের বেসরকারি কোটা পূরণ হওয়ার প্রেক্ষিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করা কোনো হজযাত্রী যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চান- তাহলে নির্ধারিত এজেন্সির সঙ্গে সব হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার আওতায় যেতে পারবেন।  

পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছর আগস্টের ২০ (৯ জিলহজ) তারিখে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি ও মন্ত্রীসভায় হজ প্যাকেজ অনুমোদনের পর প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মূল নিবন্ধন শুরু হবে।  

২০১৮ সালের হজ পালনের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি হবে ১৪ জানুয়ারি। এ জন্য ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে যাবেন। সৌদি আরবের হজমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছাড়াও অন্যান্যবারের মতো হাজি সেবা সংস্থা মোয়াচ্ছাসা চেয়ারম্যানের সঙ্গে, জেদ্দা-মক্কা-মদিনায় যাওয়া আসা নিয়ে জেনারেল কার সিন্ডিকেট ও ইউনাইটেড এজেন্সির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হবে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে মদিনায় আদিল্লা অফিসের সঙ্গেও চুক্তি করা হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

এ ছাড়া চলতি মাসের শেষের দিকে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব), বিমান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

২০১৮ সালের হজের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ হজ ফ্লাইট বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মদিনায় পরিচালনা করা হবে বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩,  ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।