পৃথিবীর ১০টি রফতানিকারক দেশের মধ্যে নেদারল্যান্ডস অন্যতম। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটির কাছাকাছি।
দেশটির অধিকাংশ জনগণ রোমান ক্যাথলিক ধর্মমতের অনুসারী খ্রিস্টান। সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে মুসলমান, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
নেদারল্যান্ডে মুসলিম নারীরা স্কার্ফ, হিজাব ও বোরকা পরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাজারে চলাফেরা করতে পারেন।
সরকার মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, আচার-অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করে না। নাগরিক সুবিধা লাভে মুসলমানদের কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হয় না।
বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হলো- নেদারল্যান্ডস মানবাধিকার কমিশনের একটি সিদ্ধান্তে।
নেদারল্যান্ডস মানবাধিকার কমিশনের মতে, নেদারল্যান্ডস পুলিশে যেসব মুসলিম নারী অফিসের অভ্যন্তরে কাজ করেন; তারা হিজাব পরে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবেন।
ডাচ আইনানুসারে, পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ছাড়া এমন কোনো কিছু পরতে পারেন না; যা দ্বারা তার ধর্ম প্রকাশ পায়। দেশটির সাধারণ নিয়ম হলো- ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি তার পোশাকও নিরপেক্ষ হতে হয়।
এ আইনের ফলে নেদারল্যান্ডস পুলিশে কর্মরত ‘সারাহ ইজাত’ নামের এক মুসলিম নারী হিজাব পরায় পুলিশ কর্তৃক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির মানবাধিকার কমিশন।
সারাহ ইজাত গত মে মাসে অভিযোগ করেন, হিজাব পরার কারণে মাঝে-মধ্যেই তাকে বিরূপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি এর প্রতিকার চান।
ইজাতের এই অভিযোগে সাড়া দিয়ে মানবাধিকার কমিশন সম্প্রতি এক রায়ে জানান, ‘ইজাতের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা অন্যায়, কারণ সে অফিসের অভ্যন্তরে কাজ করে। অফিসে তাকে অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হয়। এখানে হিজাব পরলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ কেউ তার চেহারা দেখতে পায় না। ’
হিজাব পরা তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় বিপজ্জনক হতে পারে বলে দাবি করেছিলো দেশটির পুলিশ। কিন্তু মানবাধিবার কমিশন এক্ষেত্রেও ভিন্নমত পোষণ করে।
ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে নেদারল্যান্ডসে ইসলামের অগ্রযাত্রা সূচিত হয়। দেশটির বড় বড় শহরে মুসলমানরা বসবাস করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মুসলমান রাজনৈতিক আশ্রয়ে নেদারল্যান্ডসে আসেন।
অন্যদিকে তরুণ মুসলমানদের অনেকেই ডাচ মেয়েদের বিয়ে করার ফলে স্থায়ীভাবে ডাচ সমাজের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া দাওয়াতে তাবলিগের কাজের প্রেক্ষিতে প্রচুর ডাচ অধিবাসী কোরআন-সুন্নাহর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
নেদারল্যান্ডসে ৫৮০টির মতো মসজিদ রয়েছে। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। মুসলমানরা সরকারের অনুমোদনক্রমে বেশকিছু মাদরাসা, প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও প্রদান করা হয়। রাজনীতিতে মুসলমানরা বেশ সক্রিয়। ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে সবসময় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব থাকে।
দাওয়াতে তাবলিগের মেহনত, মসজিদভিত্তিক বিভিন্ন কাজ ও শিক্ষা কারিকুলামে ধর্মীয় বিষয়াদীর উপস্থিতি বেশ চমকপ্রদ বিষয়। দেশটিতে শিক্ষার উচ্চতর পর্যায়ে ইসলাম, ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি ভাষা ও সাহিত্যকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমনকি আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ অধ্যাপকের পদ চালু রয়েছে।
-আল জাজিরা অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এমএইউ/