পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূল (সা.)-এর আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ। সারা বিশ্বে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব যুগের সব মানুষের সেরা মানুষ হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কেমন ছিলেন? এ বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রত্যেক মুসলমানের রয়েছে। বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট, সৌরভে সুবাসিত, গঠনে মধ্যম, দেহে সবল, মাথা ছিল বড় আকৃতির, দাড়ি ছিল ঘন, হস্ত ও পদদ্বয় ছিল মাংসল, উভয় কাঁধ ছিল বড়, চেহারায় ছিল রক্তিম ছাপ, চুল ছিল সরল, গণ্ডদ্বয় কোমল। চলার সময় ঝুঁকে চলতেন, মনে হতো যেন উঁচু স্থান থেকে নিচুতে অবতরণ করছেন। যদি কোনো দিকে ফিরতেন, পূর্ণ ফিরতেন। মুখমণ্ডলের ঘাম সুঘ্রাণের কারণে মনে হতো সিক্ত তাজা মুক্তো। তার উভয় কাঁধের মাঝখানে নবুওয়তের মোহর ছিল- অর্থাৎ সুন্দর চুল ঘেরা গোশতের একটি বাড়তি অংশ।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সুমহান, পূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতর চরিত্রে সুসজ্জিত, সবদিকে অতুলনীয়। আল্লাহতায়ালা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র সর্ম্পকে বলেন, ‘এবং নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। ’ -সূরা কালাম: ৪০
আল্লাহতায়ালা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ সর্ম্পকে বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে উত্তম নমুনা রয়েছে। -সূরা আহজাব: ২১
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বাপেক্ষা তাকওয়া অবলম্বনকারী ছিলেন। তিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ সম্পর্কে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি অবগত এবং আল্লাহকে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম এ কথার সমর্থনে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বলেন, আমরা গণনা করে দেখতাম হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক মজলিসে একশ’ বার বলতেন, হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো, নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী; দয়াশীল।
নবী আকরাম (সা.)স্বীয় রবের অনুগত ছিলেন। তিনি মেনে চলতেন তার আদেশ-নিষেধ। আমলে সালেহ বেশি বেশি করতেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.)-এর এই অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন, নবী করিম (সা.)-এর আমল ছিলো ধারাবাহিক। তিনি যা পারতেন তোমাদের কেউ কি তা পারবে? তিনি রোজা পালন করতেন; এমনকি আমরা বলতাম তিনি এর ধারাবাহিকতা আর পরিত্যাগ করবেন না। তিনি আবার রোজা পালন থেকে বিরত থাকতেন- এমনটি আমরা বলতাম; তিনি আর রোজা পালন করবেন না। তুমি তাকে রাতে নামাজরত অবস্থায় দেখতে না চাইলেও নামাজরত অবস্থায় তাকে দেখতে পাবে। তুমি তাকে রাতে ঘুমন্তাবস্থায় দেখতে না চাইলেও ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পাবে। -তিরমিজি
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন নামাজ আদায় করতেন দাঁড়িয়ে আদায় করতেন এমনকি তার উভয় পা ফেটে যেত, আমি বললাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ! কেন আপনি এমন করছেন অথচ আপনার পূর্বের ও পশ্চাতের সব গোণাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। জওয়াবে তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না। –আহমদ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গোটা জিন্দেগি পরিচালিত হয় পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে। এই কোরআনেই রয়েছে মানবজীবনের শান্তির দিশা।
পৃথিবীতে পুজিঁবাদ, সমাজতন্ত্রসহ নানা মতবাদ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলেও কোনো তন্ত্রমন্ত্র মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। বিশ্বে নানাসময়ে নানা মতবাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো মতবাদে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সব ব্যর্থ হয়েছে।
তাই বর্তমান বিশ্বের চিন্তাশীল মানুষ ধীরে ধীরে কোরআনের দিকে ঝুঁকছে। কেননা একমাত্র কোরআনের আলোকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই মানবজাতির জন্য কোরআনই একমাত্র শান্তির ঠিকানা তা আজ পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এমএইউ/