জন্মগতভাবে মানুষ দু’টি সত্ত্বার সমম্বয়ে গঠিত। একটি পাশবিক সত্ত্বা অপরটি মানবিক সত্ত্বা।
মানুষের মানবীয় সত্ত্বার পাশাপাশি স্রষ্টা তাকে আরও কিছু গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে- প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, উদারতা-বদান্যতা, সন্তান বাৎসল্য, স্নেহ, প্রেম-প্রীতি ও ভক্তি- শ্রদ্ধা ইত্যাদি।
পৃথিবীর শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানব বংশের গতিধারা রক্ষার জন্য অনন্য যে পদ্ধতি মানব সমাজে চালু আছে তা হচ্ছে- পরিবার। পরিবার টিকে আছে- স্নেহ-ভালোবাসা, প্রেম-ভালোবাস, সন্তান বাৎসল্য এ সবের কারণে। আমরা মানব ইতিহাসের এমন হাজারও বর্ণনা পাই যে, স্বামীর জন্য স্ত্রীর আত্মত্যাগ, সন্তানের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করা, সন্তান বাৎসল্যে নিজের আরাম-আয়েশ, সুখ-সুবিধা বিসর্জন দেওয়ার ঘটনা। আর এ সব কারণেই পরিবার ও পারিবারিক জীবনের মাধ্যমে সমাজ সভ্যতা টিকে আছে। কিন্তু বহমান এ সময়ে এমন কিছু রক্ত হিম করা ঘটনা আমাদের বিবেকবোধ এবং চিন্তা শক্তিকে বিকল করে দেয়; যা মানব সমাজে ঘটার কথা নয়। মানুষ যেন পশু সমাজকেও হার মানিয়ে ফেলেছে, পাশবিকতা ও লাম্পট্যের এমন সব ঘটনা আমাদের সমাজে এখন অহরহ ঘটছে যা সত্যিই আমাদের বিবেক ও বুদ্ধিকে ভোতা করে দিচ্ছে।
মা কর্তৃক নিজ সন্তানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা, পিতা কর্তৃক নিজ সন্তানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে হত্যা, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। আর এ সবের পেছনে লজ্জাজনক পরকীয়া বা অবৈধ প্রেম ঘটিত কারণগুলোই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
মানবীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিক মূল্যবোধ যখন শেষ হয়ে যায় তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না, সে পশুর চেয়েও নীচে নেমে যায়। মানুষের মানবীয় সত্ত্বা যখন বিলুপ্ত হয় তখন পশুত্ব বিজয়ী হয়। আজ দিকে দিকে পশুত্বের জয়ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মা কর্তৃক তার নিজ সন্তানকে হত্যা করা, স্ত্রী কর্তৃক নিজ স্বামীকে হত্যা করা, পিতা কর্তৃক নিজ সন্তানকে হত্যা করা এতো আদিম বর্বরতা এবং জাহিলিয়াতকেও হার মানাচ্ছে। জাহেলিয়াত যুগে কোনো কোনো পুরুষ নিজ কন্যা সন্তানকে হত্যা করতো- সামাজিকতা, মুখ লজ্জা, কুসংষ্কার এবং ধর্মহীনতা ও অজ্ঞতার কারণে। আমরা সে সমাজকে বলি অন্ধকার যুগের সমাজ। আজ আধুনিক সভ্যতার যুগে এ সব কি ঘটছে?
এখন আমরা আধুনিক হয়েছি, তবে সভ্যতা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধ আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। আধুনিক জাহেলিয়াত আমাদের বিবেকবোধ, চেতনাবোধ, প্রেম, ভালোবাসা সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে।
প্রতিটি মানুষের জীবনে ভালো এবং মন্দ দু’টি বিষয় থাকে। এ দুই বিষয় দিয়ে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ দুনিয়াতে আগমন করে অত্যন্ত অসহায়ভাবে। সে তার চতুষ্পার্শের পরিবেশ, সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবনের মানদন্ড নির্ধারণ করে। যে ভালোকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনের লক্ষ নির্ধারণ করে তার জন্য কল্যাণ এবং সুকৃতির পথে চলা সহজ হয়ে যায়।
বিপরীত পক্ষে যে ব্যক্তি জীবনের মানদন্ড নির্ধারণ করতে পারে না, অন্যায়, অপরাধ, অশ্লীলতার মহাসগারে হারিয়ে যায়।
আমরা মনে করি, ক্ষয়িষ্ণু এ সমাজে এখনও যতটুকু সভ্যতা, ভদ্রতা, লজ্জাশীলতা, পবিত্রতা এবং সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন টিকে আছে এর একমাত্র কারণ এ জনপদে ইসলামের অনুসারী মানুষের সংখ্যা বেশি। ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে একমাত্র মনোনীত জীবন বিধান। যে জীবন বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই এ সব অন্যায়, অনাচার, পাপাচার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা দূর করা সম্ভব। মানুষের চিন্তা, চেতনা, ধ্যানধারণা ও কর্মে ইসলাম এমন এক সুকৃতির বৃক্ষ রোপণ করে যাতে সততা, সত্যবাদিতা, শৃংখলা, পূতপবিত্রতা এবং নৈতিকতা ডালপালা মেলে চারিদিকের পরিবেশকে সুশোভিত করে তোলে।
এক শ্রেণির মানুষ এটা দেখেও না দেখার ভান করে দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের আগুণের লেলিহান শিখা আমাদের অনেকের ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। এ শিখা প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে। এ থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতির সবস্তরে ভোগবাদিতা এবং অশ্লীলতার যে বীজ রোপিত হয়েছে তার মূলোৎপাটনে চিন্তাশীল বিবেকবান মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। ইসলামি সংস্কৃতির বুনিয়াদ সমাজ, সংস্কৃতি ও ব্যক্তির জীবনে বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, যে মানুষ এক আল্লাহর অধীনে নিজের জীবন সঁপে দিয়ে তার আলোকে জীবন, সংসার, সমাজ, সংস্কৃতি গঠনে ব্রতী; তার দ্বারা পৃথিবীর কোনো অন্যায় এবং পাপ কাজ ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই মানুষকে আল্লাহমুখি হতে হবে, জীবন সঁপে দিতে হবে তার তরে। তবেই মিলবে মুক্তি ও শান্তি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
এমএইউ/