সালামের মাধ্যমে স্থাপিত হয় বন্ধুত্ব, অর্জিত হয় ভালোবাসা এবং লাভ হয় নিরাপত্তা। সালাম দাতা যেন পরোক্ষভাবে বলে আমি তোমার হিতাকাংখীম, নিরাপত্তা দানকারী ও কল্যাণকামী।
আসসালামু আলাইকু জান্নাতিদের অভিবাদনের বাক্য। পৃথিবীর আদি থেকেই সালামের প্রচলন হয়। সালামের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
ইসলামের উত্তম আমল: ইসলামি ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃদৃঢ় ও অটুট রাখার উত্তম মাধ্যম সালাম বিনিময়। এতে ব্যক্তির উন্নত আচার-আচরণ ও উত্তম স্বভাবের প্রতিফলন ঘটে। আর এটি ইসলামের উত্তম আমল।
হজরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, ইসলামে কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, অনাহারিকে খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
ভালোবাসা বৃদ্ধির মাধ্যম: সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুমিন হওয়া ছাড়া জান্নাতে যাওয়া যাবে না, আর পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া মুমিন হওয়া যাবে না। আমি তোমাদেরকে বলবো কীসের ফলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তাহলো- সালাম দেওয়া। -মিশকাত
জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম: মহানবী (সা.) বলেন, চারটি কাজ যে ব্যক্তি করবে সে নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে পারবে। যেমন তিনি বলেছেন- অনাহারিকে খাবার দাও, সালাম দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়ো, অতপর নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো। -কুরতবি ও আহমদ
আল্লাহর বন্ধু হওয়ার মাধ্যম: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করেন আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে কি গুণের কারণে খলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন? হজরত জিবরাইল (আ.) উত্তরে বলেন- তিনটি কারণে আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে খলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ১. মানুষকে খাওয়ানো, ২. সালাম দেওয়া, ৩. রাত্রে নামাজ পড়া। -কুরতুবি
ইহুদিদের হিংসার কারণ: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ইহুদিরা মুসলমানদের দু’টি কাজকে বেশি হিংসা করে। যেমন তিনি বলেছেন, ইহুদিরা তোমাদের কোনো কাজে এমন হিংসা করে না, যেমন হিংসা করে ‘সালাম ও আমিন’ বলার কারণে। -ইবনে মাজাহ
সালাম দেওয়ার অর্থ আল্লাহর নাম প্রচার করা। সালাম আল্লাহতায়ালার একটি গুণবাচক নাম।
আল্লাহর বিশেষ দান: হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা আমার উম্মতকে এমন তিনটি বিষয় প্রদান করেছেন, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেননি। তা হলো- ১. সালাম দেওয়া, যা জান্নাতিদের অভিবাদন, ২. ফেরেশতাদের ন্যায় সারিবদ্ধ হয়ে ইবাদত করা ও ৩. আমিন বলা। তবে আমিন হজরত মুসা ও হজরত হারুন (আ.)-এর যুগে ছিলো। হজরত মুসা (আ.) একদা ফেরাউনের বিরুদ্ধে বদদোয়া করেছিলেন, তখন হজরত হারুন (আ.) বলেন- আমিন! -ইবন হুযাইমা
কর্তব্য কাজ সম্পাদন: সালাম দেওয়া ও তার উত্তর দেওয়া মুমিনের কর্তব্য কাজ পালন করা। মহানবী (সা.) বলেন, একজন মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি কর্তব্য রয়েছে। ১. কোনো মুমিন অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সেবা-যত্ন করা ও খোঁজ-খবর নেওয়া, ২. কোনো মুমিন মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা, ৩. কোনো মুমিন ন্যায়সঙ্গত কোনো কাজে আহবান করলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া, ৪. কোনো মুমিন সালাম দিলে সালামের উত্তর দেওয়া, ৫. হাঁচি দিলে হাঁচির উত্তর দেওয়া, ৬. উপস্থিত ও অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় তার কল্যাণ কামনা করা। -মিশকাত
সালামের বিধান: সালাম ইসলাম ধর্ম প্রবর্তিত সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভাষণ রীতি। যা শুধু পরস্পরের জন্য দোয়াই নয়; বরং ইসলামের প্রতীকও বটে। সালাম দেওয়া সুন্নত, আর জবাব দেওয়া ওয়াজিব। জামে সগির গ্রন্থে রয়েছে- সালামের জবাব দেওয়া ফরজে আইন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
এমএইউ/