এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা লুকমানের ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ করো, তখন তারা বলে, (না) আমরা বরং আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের ওপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করবো। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি (তারা তার অনুসরণ করবে)?’
বর্ণিত আয়াতে বলা হচ্ছে, অমুসলিমদের অনেকে যুক্তি দেখিয়ে বলে থাকে, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম অনুসরণ করছে।
এই আয়াতে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পূর্বপুরুষদের ভুল বিশ্বাসকে অন্ধভাবে অনুসরণ মানুষের সত্য গ্রহণের পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। এটা বর্জনীয়।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় কৃষ্টি-কালচার ততক্ষণ পর্যন্ত সমুন্নত রাখা যাবে, যতক্ষণ তা ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এর বিপরীত হলে সে ঐতিহ্য একটি জাতির জন্য ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
বর্ণিত আয়াতে এটাও বলা হয়েছে যে, শয়তান সব সময় মানুষকে মিথ্যা ও বাঁকাপথে পরিচালিত হওয়ার জন্য কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
সুতরাং এসব কিছু থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। বিষয়টি পরের আয়াতসমূহে বলা হয়েছে এভাবে-
‘যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমণ্ডলকে আল্লাহ অভিমূখি করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সব কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। ’
‘যে ব্যক্তি কুফরি করে তার কুফরি যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। আমারই দিকে সবার প্রত্যাবর্তন, অতঃপর আমি তাদের কর্ম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবো। (মানুষের) অন্তরে যা কিছু রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। ’
‘আমি তাদেরকে স্বল্পকালের জন্যে ভোগবিলাস করতে দেব, অতঃপর তাদেরকে বাধ্য করবো গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে। ’ -সূরা লুকমান: ২২-২৪
এই আয়াতগুলোতে আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের দাওয়াতের সামনে মানবজাতিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে একদল তাদের সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে আল্লাহর সামনে নিজেদেরকে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে। আর অন্যদল একত্ববাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মুখ ঘুরিয়ে বাঁকা পথে চলে যায়। তারা এক আল্লাহকে অস্বীকার।
প্রথম দল ঐশী হেদায়েতের রশি শক্তভাবে ধারণ করে সঠিক পথের দিশা পেয়ে যায়। তাদের মাধ্যমে মানবজাতি উপকৃত হয়। মানুষের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ দেখিয়ে তারা আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহভাজন হয়ে যায় এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে অপেক্ষা করছে মহা পুরস্কার। কিন্তু দ্বিতীয় দল এই ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের কিছু ভোগসামগ্রী পেলেও তাদের চূড়ান্ত পরিণতি শুভ হয় না। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হয়।
কিন্তু সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত আল্লাহর রাসূল কাফেরদের এই দুঃখজনক পরিণতির কথা ভেবে কষ্ট পেতেন। কাফেররা তাকে নানাভাবে কষ্ট দেওয়া সত্ত্বেও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উল্টো তাদের জন্য আফসোস করতেন। তিনি চাইতেন সব মানুষ আল্লাহর দ্বীনের পথে এসে জান্নাতবাসী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করুক। কিন্তু যারা সব ধরনের নিদর্শন উপলব্ধি করা সত্ত্বেও আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদেরকে ঈমানের পথে আনতে বাধ্য করা বিশ্বনবীর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এজন্য আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.) কে দুঃখ ও পরিতাপ করতে নিষেধ করেছেন।
এই আয়াতগুলোর শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে-
১. বিশ্বের সব সৃষ্টি যখন আল্লাহতায়ালার নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং আল্লাহতায়ালা সেসব সৃষ্টিকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন তখন আমরা কেন তার নির্দেশের সামনে নিজেদেরকে সঁপে দেব না?
২. মানুষ পার্থিব জীবনে নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও বস্তুর শরণাপন্ন হয়। তারা ভাবে এসব ব্যক্তি ও অবলম্বন তাদেরকে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু মুমিন ব্যক্তি নির্ভর করে একমাত্র আল্লাহতায়ালার ওপর এবং তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড় নির্ভরতার স্থান। তারা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধরে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করার মাধ্যমে মুক্তির পথ অন্বেষণ করে।
৩. এই বিশ্বজগতের ভবিষ্যতের কথা গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে পার্থিব জীবনে আমাদেরকে নিজেদের চলার পথ বেছে নিতে হবে যাতে জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে অনুশোচনায় পড়তে এবং কঠিন পরিণতির শিকার হতে না হয়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
এমএইউ/