ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

একটি কাপড় দিয়ে হলেও শীতার্তের পাশে দাঁড়ান

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
একটি কাপড় দিয়ে হলেও শীতার্তের পাশে দাঁড়ান নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মহৎ ও পুণ্যময় কাজ

চলছে পৌষ মাস। পৌষ মানেই চারদিকে কুয়াশার বিস্তার। বেলা না গড়ালে স্পষ্ট হয় না চারপাশ। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হু-হু কাঁপন, বাতাসে শীতের আমেজ।

বাংলা ঋতুক্রমে পৌষ মাসে শুরু হয় শীতকাল। প্রকৃতির নিয়মে উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে প্রতিবারের মতো এবারও এসেছে পৌষ।

 

শীত গরিবের কাছে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার। গ্রামগঞ্জে শীতবস্ত্রহীন মানুষগুলো বড় কষ্ট করে অতিবাহিত করে শীতার্ত প্রহর। ঠান্ডায় প্রাণহানিও শীতকালের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।  

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে শৈত্যপ্রবাহ। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে উত্তরাঞ্চলে শীত বরাবরই বেশি। হিমালয় পাদদেশীয় এই অঞ্চলে শীত দুর্যোগ হয়ে আবির্ভূত হয়।  

সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা বাড়ার কথা। তাই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা শীত নিবারণে শীতবস্ত্র ক্রয় করতে পারলেও তারা একবারও কি ভেবে দেখেছেন, এ শীতে অনাথ পথশিশু, ফুটপাথে রাত কাটানো মানুষ, ভিক্ষুক, অসহায় বয়োঃবৃদ্ধ, বস্ত্রহীন মানুষ ও তাদের অসহায় সন্তানরা কতটা কষ্টে আছে?

এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে এসে না দাঁড়ায় তাহলে তারা কী জবাব দেবে আল্লাহতায়ালার কাছে? অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বিচারের দিন বলবেন- হে আদম সন্তান, আমি পীড়িত ছিলাম; তুমি আমার সেবা করোনি; আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম তুমি আমাকে আহার্য দাওনি; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। তখন বান্দা বলবে- ইয়া রব! আপনি সব কিছুর মালিক। আপনি কিভাবে পীড়িত হয়েছিলেন, কিভাবে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হয়েছিলেন? আর আমি আপনার বান্দা কিভাবে আপনার সেবা করব, খাদ্যপানীয় দেবো? আপনিই তো সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা পীড়িত হয়েছিল। তুমি তার সেবা করোনি, আমার অমুক বান্দা ক্ষুধায় কাতর হয়ে তোমার কাছে আহার্য চেয়েছিল, তুমি তাকে খেতে দাওনি। আমার অমুক বান্দা তৃষ্ণার্ত ছিল, তুমি তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সেই পীড়িতের সেবা করতে, ক্ষুধার্তকে আহার দিতে ও তৃষ্ণার্তকে পানি দিয়ে সাহায্য করতে তাহলেই আমাকে সেবা করা, আহার্য দেওয়া ও পানি পান করানো হতো।  

ঋতুর পালাবদলে শীত আসে, শীত যায়। হাড়কাঁপানো শীতে অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এ মুহূর্তে প্রয়োজন একজন মানুষ হিসেবে অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা। আল্লাহর ভালোবাসা লাভের এ সুবর্ণ সুযোগ প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করো ও বন্দীকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করো। -সহিহ বোখারি

নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মহৎ ও পুণ্যময় কাজ। অসহায় মানুষের দুর্দিনে সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মনমানসিকতা যাদের নেই, তাদের ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে কল্যাণের তথা মানবিকতা ও নৈতিকতার গুণ অর্জন করাও জরুরি। কেননা মানবিক গুণ অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি মুত্তাকি হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারে।  

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা আল্লাহ প্রেমে আত্মীয়স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থীকে ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করে, নামাজ কায়েম করে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করে, অর্থসঙ্কটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম সঙ্কটে ধৈর্যধারণ করে- তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি। -সূরা বাকারা: ১৭৭
 
শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষকে উপকারে পরকালীন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল খাওয়াবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন। -সুনানে আবু দাউদ

শীতার্তদের শীত নিবারণসহ অসহায় মানুষের দুর্দশা লাঘব মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকালে ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে। -সহিহ মুসলিম

তাই আসুন, আমরা দেশের শীতার্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি। একটি কাপড় দিয়ে একটি শিশু কিংবা একজন বৃদ্ধকে রক্ষা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, তওফিক দান করুন। আমিন।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এমএইউ/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।