আবার জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের সীমারেখাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এমন প্রবলভাবে যে, ইবাদত কবুল হবে কি না, ব্যক্তি জান্নাতে যাবে কি না তা একান্তভাবে জীবিকা উপার্জনের পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল রাখা হয়েছে। ফলে ইসলামে একজন ব্যক্তি কেবল জীবিকাই উপার্জন করে না বরং হালাল উপায় অবলম্বন করে বৈধভাবে জীবিকা উপার্জন করে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল উপার্জন অন্বেষণ করা ফরজের পরে ফরজ। ’ অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু আহার করো, যা আমি তোমাদের জীবিকারূপে দিয়েছি এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করো আল্লাহর, যদি তোমরা একান্তই তার ইবাদত করো। ’-সূরা আল বাকারা: ১৭২
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ প্রেক্ষাপটেই বলেছেন, ‘হারাম সম্পদে তৈরি গোশত ও রক্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং হারাম সম্পদে তৈরি প্রতি টুকরো গোশত ও প্রতি ফোঁটা রক্তের জন্য নরকই যথোপযুক্ত আবাস। ’
ইসলাম স্বনির্ভরতা অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাইতো ইসলামে কেউ কারও গলগ্রহ হয়ে থাকাকে সমর্থন করা হয়নি। ব্যক্তি নিজে উপার্জন করবে, নিজের আয়ের ওপর নির্ভর করবে। অন্য কারও আয়ে ভাগ বসাবে না।
এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘পবিত্রতম উপার্জন হলো- মানুষের নিজের হাতের পরিশ্রম এবং প্রত্যেক বিশুদ্ধ ব্যবসায় (এর উপার্জন)। ’
স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য কাজ করতে হলে কেউ যেন তাতে দ্বিধা না করে, লজ্জাবোধ না করে তা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামের শ্রম ও শ্রমিককে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। নানাভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা শ্রম পছন্দ করেন।
শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করে জীবিকা উপার্জন করে, সে শ্রমিক তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তাই যাদের কাছে এমন লোক আছে তাদেরকে যেন তা-ই খেতে দেয় যা তারা নিজেরা খায়, তাদেরকে যেন তা-ই পরতে দেয়, যা তারা নিজেরা পরে। তোমরা তাদেরকে তাদের সামর্থ্যরে বাইরে কোনো কাজ করতে বাধ্য করবে না। যদি তাদেরকে তোমরা কোনো কঠিন কাজ করতে দাও, তা হলে তোমরা তাদের সহযোগিতা করবে। ’ -সহিহ বোখারি
শ্রমিককে যেন তার প্রাপ্য মজুরির জন্য নিয়োগকর্তার পেছনে ঘুরতে না হয় এবং শ্রমের ন্যায্যমূল্য নিয়ে নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকের মধ্যে যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও। ’ –ইবনে মাজা
আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত রাফি ইবনে খাদিজ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একদা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন প্রকারের উপার্জন উত্তম ও পবিত্রতম? তিনি বলেন, ব্যক্তির নিজের শ্রমের উপার্জন ও সৎ ব্যবসায়লব্ধ মুনাফা। –মুসনাদ
এভাবে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অসংখ্য হাদিসে নানাভাবে মানুষকে কাজ করায় উৎসাহ দিয়েছেন।
ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি অনীহা তৈরির জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিচের হাতের চেয়ে ওপরের হাত উত্তম। ’ –সহিহ বোখারি
আল্লাহতায়ালার হুকুম আর আল্লাহর রাসূলের এ নির্দেশনা মেনে কোনো ব্যক্তি যদি স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে অনিবার্যরূপে তার ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে। উন্নয়ন ঘটবে মানবের। অদক্ষ-অক্ষম বোঝার পরিবর্তে ব্যক্তি উন্নত জনসম্পদে পরিণত হবে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এমএইউ/