আর্থিক, শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ইত্যাকার সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা একে অপরের জন্য প্রয়োজন। সাহায্য করার কিছুই না থাকলে একজন মানুষ অপর মানুষকে মধুর ভাষা ব্যবহার করে সান্তনা দিতে পারে।
একবার নবী করিম (সা.) জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তা থেকে পানাহ চাইলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আবার জাহান্নামের আগুনের কথা উল্লেখ করলেন, তারপর তা থেকে পানাহ চাইলেন এবং তার মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সাহাবি হজরত শুবা (রা.) বলেন, দু’বার যে বলেছেন এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তারপর নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাক এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পাও, তাহলে মধুর ভাষা বিনিময়ে। ’ –সহিহ বোখারি
একটি ভালো কাজের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অপর দরজা খোলা থাকে। কারণ ভালো কাজের দরজা অনেক। যখন কোনো মানুষ ভালো কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন সে মুখের ভালো কাজ চালিয়ে যাবে। তথা সে মানুষকে ভালো কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। এটিও করতে অক্ষম হলে তার জন্য এর স্থলাভিষিক্ত হলো- খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে সেটিও হবে তার জন্য সদকাহস্বরূপ।
আল মুহাল্লাব বলেন, উপরোক্ত বক্তব্য নবী করিম (সা.) বর্ণিত একটি হাদিসের সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খারাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করল, কিন্তু তা করল না, এ জন্য সে একটি সওয়াব পাবে। ’ –বায়হাকি
অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর সদকা করা কর্তব্য। সাহাবিরা বললেন, যদি তার (আর্থিক) সামর্থ্য না থাকে। নবী করিম (সা.) বললেন, তাহলে সে নিজ কর্মের মাধ্যমে নিজের এবং অপরের সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে এটি করতে সক্ষম না হয় বা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে অসহায় মুখাপেক্ষিকে সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে তা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে অন্যকে ভালো কাজের আদেশ করবে। তারা বললেন, যদি সে তা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, এটিই তার জন্য সদকাস্বরূপ। ’ –সহিহ বোখারি
আর্থিক সাহায্য যেমন একজন মানষকে খুশি করে, তেমনি ভালো কথাও একজন মানুষকে সন্তুষ্ট করে। এ জন্য নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ভালো কথা সদকাস্বরূপ। ’ –বায়হাকি
ভালো কথা একটি মহান আমল। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘খারাপ কথাকে তুমি ভালো কথা দিয়ে প্রতিহত করো। ’ –সূরা মুমিনুন: ৯৬
ভালো কথা ব্যাপকার্থক। যেমন কাউকে আসসালামু আলাইকুম বলা, তার জবাবে ওয়া আলাইকুমুস সালাম বলা ইত্যাদি।
একদা নবী করিম (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে বসেছিলেন। এক ব্যক্তি এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। সাহাবিরা তার সালামের উত্তর দিলেন। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘দশ’। দ্বিতীয় এক ব্যক্তি এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সাহাবিরা তার সালামের উত্তর দিলেন। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘বিশ’। তৃতীয় এক ব্যক্তি এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘ত্রিশ’। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! দশ, বিশ ও ত্রিশের তাৎপর্য কি? নবী করিম (সা.) বললেন, প্রতিটি ভালো কাজের বিনিময় দশগুণ। কাজেই প্রথম ব্যক্তি একটি বাক্য বলেছিলেন, ফলে তিনি দশগুণ সওয়াব পাবেন, দ্বিতীয় ব্যক্তি দু’টি বাক্য বলেছিলেন, ফলে তিনি বিশগুণ সওয়াব পাবেন, আর তৃতীয় ব্যক্তি তিনটি বাক্য বলেছিলেন, ফলে তিনি ত্রিশগুণ সওয়াব পাবেন। -আন নাবাবি
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এমএইউ/