ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হজ আদায়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় অমানবিক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৮
হজ আদায়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় অমানবিক মসজিদে হারাম সংলগ্ন হোটেল কেন- এ প্রশ্ন দিন দিন জোরালো হচ্ছে

হজ ব্যবস্থাপনা এককভাবে সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সৌদি সরকার যে খুবই আন্তরিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু সম্প্রতি হজ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের মধ্যে অসন্তুষ্টির ভাব স্পষ্ট। জেদ্দা হজ টার্মিনাল, পবিত্র মক্কা ও মদিনাকেন্দ্রিক হজের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ে।

এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীরা কতটুকু অনুকূল ও প্রতিকূলতার সম্মুখিন হচ্ছেন তা মনে হয় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের অজানা।  

সাম্প্রতিক সময়ে হজযাত্রীদের মধ্যে যেভাবে অসন্তুষ্টি ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা থেকে তিনটি প্রস্তাব সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি।  

হজযাত্রীদের থেকে নেওয়া ট্যাক্স ফেরত দেওয়া
২০১৫ ও ১৬ সালে যারা হজপালন করেছেন, ২০১৭ সালে ওই হজযাত্রীদের থেকে জনপ্রতি দুই হাজার রিয়াল করে ট্যাক্স নেওয়া হয়। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ রিয়াল ফেরত দেওয়া উচিত। যেহেতু হজকার্যক্রমে কোটা নির্ধারিত। আর কোটার অনুকূলে হজযাত্রী গমন করলে তা নিজ নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে সৌদি সরকারের ট্যাক্স আদায় করা অমানবিক। এ রিয়াল ফেরত দিতে বিনীত নিবেদন রাখছি।  

সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনরা সে সময় প্রতিকূল যোগাযোগেও বহুবার হজ করেছেন। বারবার হজ করা ধর্ম মতে বৈধ ও সওয়াবের কাজ। তাই বলছি, হজযাত্রী নিয়ে বিভিন্ন দেশে কোটা নির্ধারিত আছে। কোটা অনুসরণ করে হজযাত্রী গমন করলে সৌদি সরকার কোন যুক্তিতে ট্যাক্স নেবে? শুধু তাই নয়, যারা হজযাত্রীদের গাইড হিসেবে যাচ্ছে তাদের থেকেও গত হজে ট্যাক্স নেওয়া হয়। কাজেই সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত নিবেদন, গত হজে দুই হাজার রিয়াল করে নেওয়া হজের ট্যাক্স ফেরত দেওয়া হোক।  

জেদ্দা হজ টার্মিনাল জরুরি সংস্কার করা
জেদ্দা হজ টার্মিনাল লাখ লাখ হজযাত্রীর জন্য চরম প্রতিকূল অবস্থানের এলাকা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হজযাত্রীরা টার্মিনাল ভবনে ঢুকে কড়া এসিতে কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে পড়ে। সেখানে যেমন টয়লেট ব্যবস্থা অপ্রতুল, তেমনি অপ্রতুল যাত্রী অনুপাতে চেয়ারের সংখ্যাও। বিদেশ থেকে আগত হাজীদের টয়লেটে গিয়ে লাইন ধরতে হয়। ইমিগ্রেশনের পর হাজীরা যখন মূল ভবন থেকে বাইরের চত্বরে আসেন, তখন ৩৭-৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দগ্ধ হতে শুরু করেন।  

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত লাখ লাখ হাজী চরম প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় বাসে উঠার জন্য। হজ টার্মিনালের বিশাল চত্বরে বসার ব্যবস্থা অপ্রতুল। যা আছে তাও মানসম্পন্ন নয়। তেমনি মানসম্পন্ন নয় টয়লেট ব্যবস্থাপনাও।  

হজের পর দেশে ফেরার ৭-৮ ঘণ্টা আগে হজ টার্মিনালে রিপোর্ট করতে পরিশ্রান্ত হাজীরা আবারও বাস থেকে নেমে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রতিকূল অবস্থায় পড়েন এখানেই। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের হাজীরা অনভ্যস্ত বিধায় গরমে ছটফট করতে থাকেন। অবস্থাভেদে অনেক দূরত্বে ইমিগ্রেশনের দিকে যেতে ট্রলিও পাওয়া যায় না।  

ইমিগ্রেশনের দূরত্ব অধিক হওয়ায় বিশ্বের বড় বড় বিমানবন্দরের মানসম্পন্ন টার্মিনালের মতো বেল্ট ওয়ে না থাকা, দেশে ফেরার সময় যাত্রী অনুপাতে বসার ব্যবস্থা না থাকা, টয়লেট স্বল্পতা তথা নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে হজযাত্রীদের বিমানে উঠতে হয়। এ অবস্থার অবসান জরুরি।  

মসজিদে হারামের সম্প্রসারণ কাজ দ্রুত শেষ করা
হজে ও রমজানে পবিত্র মক্কায় মসজিদে হারামে নামাজ পড়তে যেয়ে কয়েক বছর থেকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এর মূলে মসজিদে হারাম পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ না হওয়া। মূল মসজিদে হারাম পুনর্নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। গত প্রায় তিন-চার বছর থেকে পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তির অবশিষ্ট কাজ বন্ধ রয়েছে। জানি না তার কারণ কী।  

বাদশা ফাহাদ কর্তৃক পশ্চিম দিকে সম্প্রসারণ মানানসই গ্রহণযোগ্য, কিন্তু বাদশাহ আবদুল্লাহ কর্তৃক উত্তর দিকে সম্প্রসারণ গ্রহণযোগ্য নয়। বাদশা আবদুল্লাহর উচিত ছিল মসজিদে হারামের চতুর্দিকে সম্প্রসারণে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা; কিন্তু তা হয়নি। এমতাবস্থায় সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত নিবেদন থাকবে, যেহেতু হজ ও ওমরা পালনকারীরা নামাজ পড়তে যেয়ে অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হন; তাই তিনি যেন শেষ বয়সে মসজিদে হারামের চতুর্দিকের সম্প্রসারণের কাজটি শেষ করে যান।  

মসজিদে হারামের মাত্র ১০০-১৫০ মিটারের মধ্যে জমজম টাওয়ার, হিলটন টাওয়ার, দার আত তাওহিদ হোটেল। এসবের অবস্থান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মাত্র কয়েক হাজার মানুষের আরামের জন্য মসজিদে হারামের একদম গায়ের ওপর এ তিনটি হোটেল থাকতে পারে না।  

তদ্রুপ সাফা পাহাড়সংলগ্ন জাবালে আবু কুবাইসের ওপর বিশাল রাজপ্রাসাদের অবস্থানও গ্রহণযোগ্য নয়। মক্কায় রাজপ্রাসাদ থাকুক, কিন্তু তা মসজিদে হারামের গা ঘেঁষে নয়, একটু দক্ষিণে। অর্থাৎ সম্প্রসারিত বাদশাহ ফাহাদ হেরেমের অনুসরণে চতুর্দিকে মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত জরুরি।  

সম্প্রসারণের নামে এখন মসজিদে হারামে যা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। পরিকল্পিত হলে এখানে তিনটি হোটেল, রাজপ্রাসাদ কোনো অবস্থায় গুরুত্ব পেতে পারে না। এগুলোর কারণে লাখ লাখ হজ-ওমরাকারী কষ্ট পাচ্ছেন। ফলে সৌদি রাজপরিবারের প্রতি অসন্তুষ্টি বাড়ছে। যা কোনো অবস্থায়ই রাজপরিবারের জন্য কল্যাণকর নয়।  

বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রতি বিনীত নিবেদন, উপরি উক্ত তিনটি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা রাখছি।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।