ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর মতে, অমুসলিমরা মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে।
ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতে, অমুসলিমরা হারাম শরিফে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে।
শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে বহু অমুসলিমের মসজিদে প্রবেশের প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্যদিকে মক্কা বিজয়ের পর সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধিরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলে তাদের মসজিদে নববীতে অবস্থান করতে দেওয়া হয়; অথচ তারা তখনও অমুসলিম ছিল।
সুতরাং অমুসলিমদের মসজিদে প্রবেশে কোনো বাঁধা নেই। বরং ইসলাম নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান, অপপ্রচার প্রতিরোধ, উগ্রবাদী ব্যাখ্যা দূরীকরণে অমুসলিমদের মসজিদ পরিদর্শন কার্যকর একটি পদ্ধতি। আর এ জন্য বিভিন্ন দেশে অমুসলিদের মসজিদে পরিদর্শনের আমন্ত্রণও জানানো হয়।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে মসজিদ পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মসজিদে প্রবেশ করার সময় অমুসলিমদের মসজিদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট না হয়।
মালয়েশিয়া দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। দেশের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে পাহাড় আর জঙ্গল। দেশটিতে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। ভ্রমণ খরচ কম হওয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে মালয়েশিয়া থাকে প্রথম পছন্দের তালিকায়।
মালয়েশিয়ায় অনেক মসজিদ ও ইসলামি স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনার জন্য অনেক মালয়েশীয় গৌরববোধ করেন। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থিত মসজিদগুলো বরাবরই বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। সময়-সুযোগ করে এসব মসজিদ পরিদর্শন করে থাকেন। মসজিদের অবস্থান, স্থাপত্য শৈলি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এসব মসজিদ পর্যটকদের কাছে টানে।
মসজিদে নেগারা, মসজিদে জামেক, ইন্ডিয়া মসজিদ, শ্রী পাতালিং মারকাজ মসজিদ, ক্রিস্টাল মসজিদ ও পুত্রা মসজিদ এসবের অন্যতম। এসব মসজিদ দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন।
এসব মসজিদে প্রবেশের সময় জুতা খোলার পাশাপাশি নারীদের আলখেল্লা জাতীয় পোশাক এবং স্কার্ফ দেওয়া হয়। মসজিদের প্রবেশ পথে স্কার্ফ, গাউন ও লুঙ্গি রাখা আছে। সেখানে নারী ও পুরষ কর্মীরা শর্ট পোশাকে আসা পর্যটকদের এসব গায়ে জড়িয়ে দেন। তবেই মসজিদ পরিদর্শনের সুযোগ মেলে।
মালয়েশিয়ার এমন নিয়ম মেনে বিদেশি নারী-পুরুষ পর্যটকেরা মসজিদে প্রবেশ করেন। মূল মসজিদের ভেতরে কিছুটা জায়গা তাদের পরিদর্শনের জন্য নির্ধারিত। গাউন গায়ে জড়িয়ে মাথা ও বুক ঢেকে মসজিদের কিছু অংশ দেখার সুযোগ পান।
মসজিদ নেগারাহ। এটি মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদ। এই মসজিদের মিনার অনেক উঁচু। আনাড়ি লোকেরা তা সহজে ক্যামেরায়ও ধারণ করতে পারে না। যেমন আমি পারিনি। মসজিদের ভেতরটা অপূর্ব সুন্দর। প্রতিটি মসজিদের মতো এখানেও পর্যটকের ভিড়। দেশি-বিদেশি, নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম হাজারো পর্যটক। সবাই নিয়ম মেনে ভেতরে ঢুকছে। মুসলমানরা মসজিদে নামাজ পড়ছে। আর অমুসলিমরা ঘুরে ঘুরে দেখছে, ছবি তুলছে। চারপাশে খোলা করিডোরে অনেক মানুষ বসে বিশ্রাম করছে। সামনে ও পাশের বাগানে খেলছে শিশুরা।
নেগারাহ মসজিদের সম্মুখভাগে জাতীয় কবরস্থান অবস্থিত। এখানে মালয় ইতিহাসের নায়কদের কবর রয়েছে। কয়েকজন সুলতানের কবরও আলাদাভাবে সংরক্ষিত। একটি কবর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজীব রাজাকের পিতা সাবেক মন্ত্রী তুং আবদুর রাজ্জাকের। আশেপাশে আরও রাজা, মন্ত্রী ও নেতাদের কবর। চারটি কবরের জায়গা সংরক্ষিত।
মসজিদের মূল ভবনে সাবেক খতিবদের ছবি ও পরিচিতি, পাশে একটি করে ছবি যেখানে সুলতান বা প্রধানমন্ত্রী তাদের পেছনে নামাজ পড়ছেন।
এই মসজিদের প্রবেশ পথে রাখা হয়েছে অনেকগুলো রঙিন গাউন, স্কার্ফ ও রাবার লাগানো লুঙ্গি। শর্ট পোশাকে আসা নারীদের গায়ে জড়ানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে- গাউন ও স্কার্ফ। আর শর্ট পোশাকে আসা পুরুষদের দেওয়া হচ্ছে- রাবার লাগানো লুঙ্গি। এসব গায়ে জড়িয়ে দলবেঁধে কিংবা একাকি মসজিদ পরিদর্শন করেছেন পর্যটকরা। এতে কাউকে বিরক্ত মনে হলো না। বরং এটা তারা উপভোগই করছেন বিষয়টি।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
এমএইউ/