ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হজযাত্রীদের জন্য পরামর্শ...

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
হজযাত্রীদের জন্য পরামর্শ... পবিত্র কাবা শরিফ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সঠিকভাবে হজ পালন করা ও সুস্থভাবে ফিরে আসাকে পরম সৌভাগ্যের বিষয় বলে মনে করেন পবিত্র হজব্রত পালনেচ্ছুকরা। যদি জেনে নেওয়া যায় কিভাবে সহজে এই পবিত্র কাজটি সম্পাদন করা যাবে তাহলে সুবিধা হয় হাজীদের।

আর যারা প্রথমবার যাচ্ছেন তাদের জন্য হজ সম্পর্কে সব তথ্য জানা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
 
হজের সময় সঙ্গে মোয়াল্লেম থাকেন।

কিন্তু ‘মোয়াল্লেমদের মাধ্যমে শতভাগ সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়’- এমন অভিযোগ স্বীকার করে নেন অনেকেই। তবে হজ পালনের ফরজ ও ওয়াজিবগুলোর নির্দেশনা সহজেই পাওয়া যায় বা মোয়াল্লেম নিজ দায়িত্বেই তা সব করিয়ে দেন।  

আবার হজের আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষই এ প্রশিক্ষণের আওতায় থাকেন না। তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী পদক্ষেপ হচ্ছে হজব্রত পালন করে এসেছেন এমন কাছের পরিচিতদের থেকে পরামর্শ নেওয়া।
 
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য এবার হজ পালন করা সে রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলছেন বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার এস এম লুৎফর রহমান ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাহবুব হাসান।  

তাদের পরামর্শে জানানো হচ্ছে যারা প্রথম হজে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে উপকারী নানা তথ্যাদি।  
 
শুরুতেই চেকলিস্ট করা প্রয়োজন। মক্কা বা মদিনায় ব্যবহার্য প্রায় সব কিছু পাওয়া যায়। তাই শুধুমাত্র একান্ত প্রয়োজনীয় বা ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে গেলে ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। আর প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক চাপ নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
 
মনে রাখতে হবে সৌদিতে এখন গরমকাল। আর বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই পপলিন কাপড় ব্যবহার করে, যাতে বাতাস চলাচলের সুবিধা কম। এ কারণে উন্নতমানের কুমিল্লার খাদি কাপড় ব্যবহার করা উত্তম। আর কমপক্ষে চার সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে নেওয়া উচিৎ।  

এই ইহরাম বাঁধার জন্য কোমরে কাপড়ের তৈরি বেল্ট ব্যবহার করা ভালো। এতে ইহরাম বেঁধে হাঁটাহাঁটি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা ছাড়াও এই বেল্টের পকেটে পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা যাবে। আর এ বেল্ট সেলাই করা হলেও কোনো সমস্যা নেই।
 
হজে কখনো মসৃণ আবার অমসৃণ পথ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। তাই স্যান্ডেলটি সুবিধাজনক না হলে অনেক অসুবিধা হওয়াটা স্বাভাবিক। তুলনামূলক নরম দুই ফিতার স্যান্ডেলই হজে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আর নারীদের ক্ষেত্রে পামসু। তবে হজে যাওয়ার আগেই দেশে থাকতে তা পরে চলাচল করে অভ্যাস করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও পা ছিলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ (মলম) দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কেননা ওখানে এর ওষুধ খুব কম পাওয়া যায় এবং দামও বেশি।
 
এছাড়া নিয়মিত যিনি যে ওষুধ সেবন করেন তা নেওয়ার পাশাপাশি প্যারাসিটামল, এন্টি-হিস্টামিন, ওর-স্যালাইন, অ্যামোডিস জাতীয় ওষুধ নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।  

ফল-ফলাদি কাটার ছুরি, কাঁচি, সুই-সুতা, এক সেট অতিরিক্ত চশমা (নিয়মিত না পরলেও ধূলাবালী থেকে মুক্ত থাকতে) ছোট ডায়েরি ও কলমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতব্যাগে না রেখে মূল লাগেজে রাখা ভালো।  

আর সৌদি যাওয়ার আগেই মাথা ন্যাড়া করে নেওয়া উচিত। হজে মিনায় কোরবানির পর মাথা ন্যাড়া করতে হয়। তখন অনেক ভিড়ের কারণে প্রফেশনাল চুল কাটার লোকজনের সঙ্কট পড়ে। আর নিজেরা এই কাজ করা অনেক ঝুঁকির। তাই আগে থেকে মাথা ন্যাড়া করে পরে ওই সময় একটা ব্লেড দিয়ে অনেকটা প্রতীকী মাথা ন্যাড়া করলেও সমস্যা নেই।   
 
ঘর থেকে ইহরাম বেঁধে প্লেনে ওঠা ভালো। কেননা যখন মিকাতে (প্লেনে থাকতে নিয়ত করার নির্ধারিত স্থান) ইহরাম বাঁধার ঘোষণা দেয় তখন অনেক সময় বোঝা যায় না।  

তাই এতে ইহরাম মিস করার সম্ভাবনা থাকে না। আবার প্লেন থেকেই টয়লেটের কাজ সেরে জেদ্দা এয়ারপোর্টে নামা উচিৎ। কেননা জেদ্দা এয়ারপোর্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় কম সংখ্যক টয়লেটে দীর্ঘ লাইন আর টয়লেটের মেঝেতে পানি জমে থাকার কারণে পরিবেশ ঘোলাটে থাকে।  
 
হজের সময় মক্কায় অনেক ভিড় থাকার কারণে সময় ও সুযোগ বুঝে উমরাহ হজ সেরে নিতে হবে। সময়টা হতে পারে রাত ১২টার পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত ও সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত।  

আবার নফল নামাজ পড়ার চেয়ে তাওয়াফ করা উত্তম। কেননা নফল নামাজ যে কোনো স্থানে পড়া গেলেও ভিড়ের কারণে মক্কায় একবারের বেশি তাওয়াফ করা অনেক কঠিন কাজ। আর তাওয়াফের ক্ষেত্রেও একই সময় মানা যেতে পারে। ভিড়ের মধ্যে দোতলা-তিনতলা দিয়েও তাওয়াফ করা যেতে পারে।
 
মিনা একটি চ্যালেঞ্জের স্থান। প্রথমত লাখ লাখ তাবু থাকায় নিজের তাবু হারানো স্বাভাবিক। তাই এদিকে বিশেষ খেয়াল দেওয়া ছাড়াও গরমের পরিমাণ অত্যাধিক হওয়ায় ওখানকার এয়ার কন্ডিশন দিয়েও পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয় না। তাই ঘামের কারণে ডিহাইড্রেশন দূর করতে প্রচুর পানীয় পান করতে হবে এবং সঙ্গে টিস্যুও রাখতে হবে।

আর এখানকার টয়লেটে সবসময় অনেক লম্বা লাইনের চাপ থাকে। এমনকি টয়লেটে পানির লাইনের নলটি খোলা থাকে ও অনেক সময় প্যানে পড়ে থাকে।
 
মুজদালিফায় গিয়ে প্রথমদিনই কংকর সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এটা সুন্নত। এর পরদিন মিনা থেকে নিলেও হবে। কংকর নিক্ষেপের সময় সতর্ক থাকতে হবে।  

নিক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে স্থান ত্যাগ করতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে অন্যের কংকর যেনো আপনার গায়ে এবং আপনার কংকর যেনো অন্যের গায়ে না লাগে।     
 
তাওয়াফের সময় সবুজ বাতি দেখে কাবা শরিফ বাম দিকে রেখে বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলে শুরু করতে হবে। আর হাজরে আসওয়াদের দিকে ইংগিত করে চুমু খাওয়া উচিত। ভিড়ের মধ্যে সরাসরি চুমু খাওয়া অনেক ঝুঁকির বিষয়। আর প্রতি চক্কর শেষে সবুজ বাতির স্থানে এসে হাত উঁচু করতে হবে।  

নারীদের না করলেও চলবে। তাওয়াফের সাত চক্কর শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক।
 
সাফা মারওয়া পাহাড়ে না দৌড়িয়ে দৌড়ের ভান করা ভালো। দৌড়ালে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এরপর আবার মিনায় ফিরে ধীরে সুস্থে কংকর নিক্ষেপে করবেন। এখানকার কংকর নিক্ষেপের সময় আগে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলেও এখন তা ফজরের আগ পর্যন্ত বর্ধিত রয়েছে শুধুমাত্র দুর্ঘটনা এড়াতে।
 
মসজিদে নব্বীতে পুরুষ ও নারী আলাদা প্রবেশ এবং বের হতে হবে। আর নবীজী (স.) এর রওজার সামনে অপেক্ষাকৃত ছোট ডিস্কের মতো করা আছে। এটার ছবি নিতে পারেন, কিন্তু পুলিশ দাঁড়াতে দেবে না তা খেয়ালে রাখবেন।  

আর রওজার সামনে নামাজ পড়তে রাতের সময়টাই বেছে নেওয়া উত্তম, ভিড় কম থাকার কারণে।
 
যমযম কূপের পানি ২০ লিটারের বেশি বহন করা যায় না, তাই অতিরিক্ত পানি নেবেন না। আর বাকি সবকিছু কেনার ক্ষেত্রে দর কষাকষি করে নেবেন। যদিও অনেক সময় ডিসকাউন্ট থাকে।  

এখানেও লাগেজের নির্দিষ্ট ওজন খেয়ালে রাখবেন। সব জায়গায় হুইল চেয়ার থেকে সাবধানে থাকবেন। কারণ যারা এটা ঠেলে তারা প্রফেশনাল। তাই দ্রুত ও সোজা যাওয়ার চেষ্টায় থাকে। আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের হাজীদের থেকে সাবধানে থাকবেন।  

তারা অনেক বলশালী ও লম্বা হওয়ায় দ্রুত চলাফেরা করে। আর সব ক্ষেত্রে দৃষ্টি সংযত রাখবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
এমএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।