ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

গিলাফ ছড়িয়ে ওরস শুরু শাহজালালের মাজারে

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৮
গিলাফ ছড়িয়ে ওরস শুরু শাহজালালের মাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাজারে এসেছেন ভক্ত-আশেকানরা। ছবি: আবু বকর

সিলেট: প্রায় ৭০০ বছর আগের ইতিহাস। অলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালালের প্রয়াণের পর নগরের নাইয়রপুল থেকে গিলাফ নিয়ে এসেছিলেন সৈয়দ ওমর সমরখন। সেই থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী হযরত শাহজালালের মাজারে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বার্ষিক ওরস মোবারক।

বৃহস্পতিবার (০২ আগস্ট) ৬৯৯তম ওরস মোবারক শুরু হয় গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে।  এদিন সকাল ৯টা থেকে মাজারে গিলাফ ছড়ানো শুরু হয়।

মাজার সূত্র জানায়, গিলাফ ছড়ানোর মাধ্যমে শুরু হয় ওরসের মূল কার্যক্রম। এরপর থাকবে খতমে কোরআন। রাত ১২টার পর ভক্ত আশেকানির জিকিরে বাতাসে ধ্বনিত হবে ‘আল্লাহু, আল্লাহু’।

ভোররাত সাড়ে ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে আখেরি মোনাজাত ও পরে শিরনী বিতরণ শেষে দু’দিন ব্যাপী ওরস সমাপ্ত হবে।

হযরত শাহজালাল মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামুন মাহমুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, মাজারের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ১ হাজার ২০০ ভলান্টিয়ার রয়েছেন। পুরো এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে রয়েছে ২০টি সিসি ক্যামেরা যা পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
ওরস উপলক্ষে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।  ছবি: আবু বকর
তিনি বলেন, মাজারে এবার শতাধিক পশু জবাই করা হবে। শিরনী হবে প্রায় ৩০০ মন চালের। এছাড়া মাজারে আসা মেহমানদেরও খাবারের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বাংলানিউজকে বলেন, মাজারের নিরাপত্তায় নারী পুলিশসহ কমপক্ষে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে। চারটি ফটকে অন্তত ১৫/২০ জন করে পুলিশ কর্তব্য পালন করবেন। তাছাড়া নিরাপত্তার খাতিরে মাজার গেইটে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওরস উপলক্ষে এখন লাখো ভক্ত আশেকানের পদচারণায় মুখরিত মাজার প্রাঙ্গণ। শাহজালালের শানে বিভিন্ন গান ও গজল গেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও মাজারে আসছেন ভক্ত-আশেকানরা। শহরের সব মানব স্রোত যেন এখন মাজারমুখী।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাজারে এসেছেন ভক্ত-আশেকানরা।  ছবি: আবু বকর
এরই মধ্যে অসংখ্য অনুরাগীরা শামিয়ানা টাঙিয়ে দলে দলে জড়ো হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীগোষ্ঠীরাও ভক্তিমূলক গানেরজলসা বসিয়েছেন মাজারে।

শাহজালালকে উৎসর্গ করে কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্রসহকারে আবার কেউ খালি গলায় তুলছেন ভক্তিমূলক ও দেহতত্ত্ব গানের সুর। গানের তালে মাতিয়ে রাখছেন আগন্তুক দর্শনার্থীদের।

এদিকে, বৃহস্পতিবার প্রথম গিলাফ ছড়িয়েছেন মাজার কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মাজারে গিলাফ প্রদান করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতারা। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন মাজারে গিলাফ ছড়িয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ সালে ৩৬০ সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ সালের ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটে তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এই মাজার সারা বছরই ভক্ত আশেকান ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি হযরত শাহজালালের ওরসে বোমা হামলায় ৫ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনার পর থেকে প্রতিবছর ওরস এলেই  নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৮
এনইউ/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।