এরই মধ্যে কোরবানির প্রস্তুতিও শেষের দিকে। পশু কেনা থেকে শুরু করে সার্বিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
‘কোরবানি’ শব্দটির আরবি ‘কুরব’; আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আত্মোৎসর্গ করাকে বলা হয় কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার উদ্দেশ্যে পশু জবাই করাকে কোরবানি বলা হয়। কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম।
এছাড়া হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার ঐশী নির্দেশের পরীক্ষা থেকে বর্তমান পদ্ধতির কোরবানির সূচনা হয়েছে।
ঈদুল আজহার তিনদিনের মধ্যে (জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত) আল্লাহের নামে জীবন্ত চার পা ওয়ালা পশু জবাই করা হয়।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মালিক হয় অথবা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয় তার জন্য কোরবানি করা হবে ওয়াজিব।
কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে
** হালাল উপার্জন দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করুন।
** আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের স্পৃহা ও ওয়াজিব আদায়ের প্রেরণা মনে জাগ্রত করুন।
** কোরবানিকে সুখ্যাতি ও প্রদর্শন ইচ্ছার চিন্তা মন থেকে দূর করুন।
** ভাগে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে পশু কেনার আগেই ভাগিদার নির্বাচিত করুন। এটা মোস্তাহাব আমল।
** যার ব্যাপারে নিশ্চিত জানা আছে, তার উপার্জন হারাম, তাকে কোরবানির শরিক করবেন না।
** কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করলে, জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার আগে নখ, চুল এবং অবাঞ্চিত লোম কেটে ফেলুন। এটাও মোস্তাহাব আমল।
পশু কেনার সময় করণীয়
** যে পশুর ব্যাপারে ধারণা হবে যে, তা চুরি করে আনা তা কিনবেন না।
** কোরবানি পশু ক্রয়-বিক্রয়কালে মিথ্যা কথা ও মিথ্যা শপথ বর্জন করুন।
** কোনো পশুর মূল্য চূড়ান্ত করার পর কোনো দাম বলবেন না অথবা ক্রয়ের প্রস্তাব দেবেন না। এটা মাকরূহ।
** কেনা পশুটি ভালোভাবে দেখে নিন।
** খেয়াল রাখতে হবে গরু, মহিষের বয়স যেনো দুই বছরের কম না হয়, উটের বয়স যেনো পাঁচ বছরের কম না হয়, ছাগলের বয়স যেনো এক বছরের কম না হয়। ছয় মাস বা তদূর্ধ্ব বয়সের ভেড়া, দুম্বা দেখতে যদি এক বছর বয়সের মতো মনে হয় তবে তা দ্বারা কোরবানি করা যাবে। গরু, মহিষ, উট ও ছাগলের জন্য বয়সের কোনো ছাড় নেই। যতোই হৃষ্ট-পুষ্ট হোক নির্ধারিত বয়স পূর্ণ হতে হবে।
** কান, জিহ্বা ও লেজ যেনো অর্ধেকের বেশি কাটা না থাকে। চোখের দৃষ্টি শক্তি অর্ধেকের বেশি যেনো নষ্ট না থাকে।
** পশুর শিং যেনো এ পরিমাণ ভাঙা না থাকে যার প্রভাব মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
** জানাশোনায় প্রসব সময় নিকটবর্তী এমন পশু ক্রয় করে কোরবানি করা মাকরূহ। তবে কোরবানি আদায় হবে।
** বন্ধ্যা পশুর কোরবানি জায়েজ। অণ্ডকোষ কাটা পশু কোরবানি করা উত্তম।
** খাবার খেতে পারে না বা নড়া-চড়া করতে পারে না এতো দুর্বল পশুর কোরবানি শুদ্ধ নয়।
** বন্য ও হিজড়া প্রজাতির পশুর কোরবানি জায়েজ নেই।
কোরবানির পশু ক্রয়ের পর করণীয়:
** পশুর সেবা-যত্ন করুন। অহেতুক পশুকে কোনো কষ্ট দেবেন না।
** পশু এমন স্থানে বাঁধুন যেনো পথচারীদের কষ্ট না হয়। পশুর গলায় ঘণ্টি বাঁধবেন না।
** কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশুর ওপর আরোহণ করবেন না বা কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না।
** যদি দুধ দোহন করা হয় তবে গরিব-মিসকিনকে দান করে দিন। আবার দুধের বাজার মূল্য দান করে নিজেও সে দুধ পান করতে পারবেন।
** কোনো অবস্থাতেই কোরবানির পশুর প্রদর্শনী করবেন না।
** ভাগে কোরবানি দিলে ভাগিদার সবাইকে সবকাজে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
আরআইএস/