অন্যদিকে, আমেরিকার ফ্লোরিডায় আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় মাইকেল। ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট এই ঘূর্ণিঝড়কে একশ’ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন।
বৈশ্বিক তাপমাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে বড় সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিয়ন শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের দ্য ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এ ব্যাপারে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সম্মেলনে ১৯৫টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। গবেষকরা বলছেন, পরিবেশের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। এতে খরা, বন্যা, অতিরিক্ত গরম ও লাখো মানুষের দারিদ্র্যের ঝুঁকি বাড়বে। তাছাড়া ভূমিকম্পের হারও বেড়েছে বেশ। কিছুদিন আগে ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ সুনামি বয়ে গেলো। তাতে হতাহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ছাড়িয়েছে।
কিন্তু এসব কেনো হচ্ছে? দিন দিন এগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কেনো? আমাদের পাপের মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার ফলে এসব হচ্ছে না তো? মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মানুষ নিজ হাতে যা পাপা করে, তার ফলে স্থলে ও জলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করাবেন। হয়তো এর ফলে তারা ফিরে আসবে। ’ (সুরা রুম, আয়াত: ৪১)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, দুনিয়ায় যে ব্যাপক বালা-মুসিবত দেখা দেয়, যেমন দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্প, শত্রুর আগ্রাসন, জালিমের আধিপত্য ইত্যাদির প্রকৃত কারণ হলো ব্যাপকভাবে আল্লাহ তায়ালার হুকুম অমান্য করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া। এভাবে বিভিন্ন বিপদাপদ মানুষের আপন হাতের কামাই হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর এসব বিপদাপদ চাপিয়ে দেন, যেনো মানুষের মন কিছুটা নরম হয় এবং দুষ্কর্ম থেকে নিবৃত্ত হয়।
জেনে রাখা দরকার, দুনিয়ায় যেসব বিপদাপদ দেখা দেয়, অনেক সময় তার বাহ্যিক কারণও থাকে। যা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী আপন কার্যক্রিয়া প্রকাশ করে। কিন্তু এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই কারণও আল্লাহ তায়ালারই সৃষ্টি। উপরন্তু বিশেষ সময় ও নির্দিষ্ট স্থানে সেটি সক্রিয় হওয়াও আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত মানুষের পাপাচারের কারণেই তিনি মানুষকে বিপদাপদে আক্রান্ত করেন। বিভিন্নভাবে পরীক্ষায় ফেলেন।
এ আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে, সাধারণ বালা-মুসিবতের সময় নিজেদের গুনাহের কথা স্মরণ করে, আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা ও ইস্তিগফারে লিপ্ত হওয়া চাই, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তা বাহ্যিক কোনো কারণ ঘটিত বিষয়। (তাওজিহুল কোরআন, ৩/৩৩)
এ ধরনের আজাব বা শাস্তির ব্যাপারে চৌদ্দশ’ বছর আগেই রাসুল (সা.) সতর্ক করে গেছেন। কী কী ধরনের কাজে লিপ্ত হলে এ ধরনের আজাব শুরু হবে, তারও ধারণা দিয়ে গেছেন তিনি। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মত যখন ১৫টি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তখন তাদের ওপর বিপদ-মুসিবত এসে পড়বে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, যখন গনিমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানত লুটের মালে পরিণত হবে, যাকাত জরিমানা হিসেবে গণ্য হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে। বন্ধুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, কিন্তু বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে। মাসজিদে শোরগোল করা হবে, সবচাইতে খারাপ চরিত্রের লোক হবে, তার সম্প্রদায়ের নেতা। বিভিন্ন লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা হবে। মদ পান করা হবে, রেশমি বস্ত্র পরিধান করা হবে এবং এই উম্মতের শেষ জমানার লোকেরা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা একটি অগ্নিবায়ু অথবা ভূমিধস অথবা চেহারা বিকৃতির আজাবের অপেক্ষা করবে। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২২১০)
তাই আমাদের উচিত, বড় ধরনের কোনো আজাব আসার আগেই আল্লাহর কাছে তওবা করা। আর রাসুল (সা.) যে কাজগুলো বর্জনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেগুলো বর্জন করা। এখনও তওবার দরজা খোলা আছে। আমরা ফিরে এলেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য (কেয়ামতের সবচেয়ে নিদর্শন) ওঠার আগে তওবা করলে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ২৭০৩)
আল্লাহ আমাদের তওবা-ইস্তিগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামবিষয়ক গবেষক
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৮
এমএমইউ/টিএ