জীবনাচারের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো রাত্রিযাপনেও ইসলাম আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে। হাদিসের আলোকে মুমিনের রাতযাপনের সংক্ষিপ্ত নিয়ম তুলে ধরা হলো।
ঘুমানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি
ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল (সা.)। হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সন্ধ্যাবেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘর থেকে বের হতে দিও না, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও (প্রভাব ফেলে) করে। ঘুমের আগে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্বলিত সলিতাযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের লোককে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৩৩১৬)
শোয়ার স্থান নির্বাচনে সতর্কতা
নির্জন কোনো ঘরে একাকী রাত যাপনের বিষয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাতযাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন। ’ (আহমাদ, হাদিস নং: ৫৬৫০)
বাসা-বাড়ির ছাদেও শোয়া উচিত নয়। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমায়, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৫০৪১)
এশার পরে অপ্রয়োজনে রাত্রি জাগরণ করবে না
এশার নামাজের পর অনর্থক গল্পগুজব এবং দীর্ঘ রাত পর্যন্ত অহেতুক জেগে থাকা মহানবী (সা.) অপছন্দ করতেন। তবে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন। মুসলমানদের সম্পর্কে কল্যাণকর পরামর্শের জন্য অনেক সময় রাতে তিনি আবু বকর (রা.)-এর বাসায় যেতেন। (তাহাবি শরিফ, হাদিস নং : ৭২০৩)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের রাতের গল্পগুজবে মত্ত হতে নিষেধ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ২৪৩৫)
আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে: বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং : ৪৮৭৯)
যারা কর্মব্যস্ত কিংবা রাতে দায়িত্ব পালন করতে হয়, তারা রাত জাগায় কোনো অসুবিধা নেই। বরং দায়িত্বের প্রতি তাদের নিষ্ঠাবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইসলাম।
বিছানা পরিস্কার করা বা ঝেড়ে নেয়া
শয্যা গ্রহণের আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর এ দোয়া পড়বে—হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৩২০)
আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত
রাসূল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ২৩১১)
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। ’ (বোখারি ও মুসলিম)।
সূরা কাফিরুন, ইখলাস, নাস ও ফালাক পড়ে ফুঁ দেয়া
সূরা কাফিরুন, এখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া সুন্নত। নাওফাল আল-আশজায়ি (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে বলেছেন, তুমি সূরা ‘কাফিরুন’ পড়ে ঘুমাবে, এতে শিরক থেকে তুমি মুক্ত থাকবে। ’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সূরা এখলাছ, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বুলাতেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫০১৭)
দোয়া পড়ে ঘুমানো
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নের পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বঞ্চনা নেমে আসবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)
হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো দোয়া পড়তে না পারলেও ছোট এ দোয়াটি পড়া যায়: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া’—অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনর্জাগ্রত হব। ’
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
এমএমইউ/এসএইচ