এই মসজিদে পরবর্তীকালে জার্মানির মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগি করত। জার্মানির সেনসেশন এবং অ্যালিলিনিং গার্ডেনেও অবশ্য মুসলমানদের ইবাদতের জন্য মসজিদ ছিল।
নির্মাণের ইতিহাস
মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনাটি জার্মানির কর্মকুশলীদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় ছিল। অবশ্য কর্তৃপক্ষ মসজিদ নির্মাণের আগে এ অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ক্যাম্পও নির্মাণ করেছিল। পরে জানা যায়, তুরস্কের পঞ্চম সুলতান মুহাম্মাদ জার্মানিতে মুসলিম বন্দীদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত, উত্তর আফ্রিকা ও সিরিয়ার প্রায় ৪ হাজার বন্দি এবং ফরাসি ঔপনিবেশিক দেশগুলো থেকে ১২ হাজার বন্দি ওয়েসেনডর্ফ ক্যাম্পে রাখা হয়।
জার্মানরা মুসলিম সৈন্যদের মিত্রশক্তির (ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া) বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। তাদের এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প ও মসজিদ নির্মাণ করে। এ জন্য জার্মানির সামরিক মন্ত্রণালয় ১৯১৫ সালে একটি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেয়। মসজিদটি ৫ সপ্তাহের মধ্যে এক হাজার ‘রিচ মার্ক’ ব্যয়ে (তৎকালীন জার্মান মুদ্রা) নির্মাণ করা হয়। মসজিদের কেন্দ্রীয় ভবনে চারদিক থেকেই যাতায়াত করা যেতো। গম্বুজবিশিষ্ট এই ভবনে নামাজের জন্য বিশেষ একটি কক্ষও নির্মাণ করা হয়।
ভবনের দক্ষিণে প্রবেশদ্বার রাখা হয়। উত্তরে খতিবের জন্য আলাদা কক্ষ এবং মৃতদের রাখার জন্য পৃথক কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ভবনের উত্তর দিকে বর্গাকারে একটি প্রাঙ্গণ নির্মাণ করা হয়। সেখানে একটি জলাধারও তৈরি করা হয়।
মসজিদের বাইরের ও অভ্যন্তরের প্রাচীরে তেল রং ব্যবহার করা হয়। দেয়ালের রং ছিল ধূসর। উপরে লাল এবং ধূসর ফিতা আঁকা ছিল। নামাজঘরের মেঝের জন্য পাথর ব্যবহার করা হয় এবং মাদুর দিয়ে মেঝে ঢেকে দেওয়া হয়।
মসজিদের মিনারটি ২৩ মিটার উচ্চ এবং কেন্দ্রীয় গম্বুজের ব্যাস ১২ মিটার ছিল। বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের এ মসজিদে নামাজ পড়ার কথা ছিল। মসজিদটি নির্মাণের জন্য স্পেনের ‘কুব্বাতুলস্ সাখরা’, অটোমান মসজিদ এবং তাজমহলসহ বিভিন্ন মুসলিম স্থাপত্যশৈলী ব্যবহার করা হয়। পরে ১৯১৫ সালের ১৩ই জুলাই (রমজান মাসে) তুরস্কের কূটনীতিক মাহমুদ মোখতার পাশার উপস্থিতিতে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়।
প্রথম মসজিদটি ধ্বংসের কারণ
মসজিদটি নির্মাণ এবং মুসলমানদের আকৃষ্ট করার পর মাত্র দুই হাজার মুসলিম জার্মানির পক্ষে যুদ্ধ করতে সম্মত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এসব মুসলমান ধীরে ধীরে নিজেদের দেশে ফিরে যায়। এদের মধ্যে শুধু ৯০ জন মুসলিম জার্মানিতে থেকে যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতির মাধ্যমে তারা ভিলমারসার্দাফে জীবনযাপন করতে থাকে। পরবর্তীতে তারা ১৯২৪ সালে ভিলমারসার্দাফে মসজিদ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় উইনসফোর্ড মসজিদ ব্যবহার করার জন্য কারও তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই তারা সরকারের কাছে উইনসফোর্ড মসজিদটি ১০ হাজার রিচ মার্কে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থে ভিলমারসার্দাফ মসজিদ নির্মাণের কাজে লাগানো সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯২৭ সালে যখন ভিলমারসার্দাফ মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ হয়, তখন উইনসফোর্ড মসজিদটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এভাবে মসজিদটি নির্মাণের ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৩০ সালে ভেঙে ফেলা হয়। মসজিদ ভেঙে ফেলার পর স্থানীয়রা ওই রোডের নাম মসজিদ রোড নামকরণ করে। এরপর ওই জায়গায় তাতে মসজিদের বিবরণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে একটি বোর্ড স্থাপন করা হয়।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন : bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এমএমইউ