ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মাসজিদুল হারামের খুতবা

পরিশুদ্ধ অন্তর জীবন সুন্দর করে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৯
পরিশুদ্ধ অন্তর জীবন সুন্দর করে শায়খ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ

তাকওয়া-আল্লাহভীতি অবলম্বন করুন। সততার পথে অবিচল থাকুন। সৎ পথে চলতে থাকলে মানুষ আল্লাহর কাছে সত্যবাদি হিসেবে বিবেচিত হয়। আর মিথ্যার চেয়ে খারাপ কিছু নেই। মানুষ মিথ্যার পথে চললে আল্লাহর কাছেও মিথ্যুক হিসেবে স্বীকৃত হয়ে যায়।

সুস্থ ও পরিশুদ্ধ অন্তর অনেক বড় নেয়ামত। জান্নাতিদের অন্যতম একটি গুণ এটি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তাদের অন্তরের ক্রোধ দূর করে দেব, তারা ভাই ভাই হয়ে সামনা সামনা আসনে বসবে। ’ (সুরা হাজর, আয়াত : ৪৭)

পক্ষান্তরে অন্তরে দ্বন্ধ-সংঘাত ও হিংসা-বিদ্বেষ জায়গা করে নিলে, তা হবে অনেক বড় আজাব। তাই কারও সঙ্গে ঝগড়-বিবাদ নয়। বরং কেউ কষ্ট দিলে তাকে ক্ষমা করুন। অন্যের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করুন। অপরের দোষ-ত্রুটি না খুঁজে সুন্দর ব্যবহার করুন। সবার প্রতি সুধারণা রাখুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ এক হতে পারে না, সর্বোত্তমভাবে অন্যের কাজের জবাব দিন, তখন আপনার সঙ্গে যার ঘোরতর শত্রুতা, সে ঘনিষ্ঠ আপনার বন্ধু হবে। ’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৩৪)

বান্দার ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো, প্রাণবন্ত অন্তর। এতে বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে। সতর্কও হতে পারে। মানুষের জীবন স্থির নয়। নানা রকম সমস্যা ও দুঃখ-দুর্দশা আসবে জীবনে। কখনও তা অনেক বড় হয়ে আসে। আবার কখনও তা ছোট থাকে। সবসময়ই সময়েই আল্লাহকে স্মরণ রাখবেন।

মানুষ মারা যাওয়ার আগে জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারে। পুরো জীবন যদি আল্লাহর নির্দেশ মতো কাটানো হয়, তাহলে জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণেও আল্লাহকে স্মরণ হয়।

মানুষের জীবনে সুস্থতা-অসুস্থতা, প্রাচুর্য ও দারিদ্রতা আসে। কখনও আকাশ ছোঁয়া প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হয় সে। এ সময় শক্তিমত্তার অধিকারী হয়ে থাকে। চারপাশে থাকে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা। অন্তরে দোল খেতে থাকে স্বপ্নচূড়া আশা ও আকাঙ্ক্ষা। স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলতে থাকে জীবনতরী।

কিন্তু এক সময় সে বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে। অথবা অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার শিকার হয়। জীবনসয়াহ্নে এসে উপনীত হয়। তখন তার আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আর থাকে না। আশপাশের লোকগুলোও হারিয়ে যায়। তার আবেগ-অনুভূতিও পাল্টে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তুমি দুনিয়াতে আমার ব্যাপারে উদাসীন ছিলে, তোমার চোখের সামনে থেকে সে পর্দা উম্মোচন করেছি, আজ তুমি সবকিছুই ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছ। ’ (সুরা ক্বাফ, আয়াত : ২২)

সেদিন সে বুঝতে পারে, দুনিয়ায় সবচেয়ে দামি বস্তু হলো সুস্থ অন্তর। সৎকর্ম ও সুন্দর এবাদতই জীবনের প্রকৃত সম্পদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেদিন কোনো সম্পদ বা সন্তান কোনো কাজে আসবে না, তবে যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে কেবল সেই পরিত্রাণ পাবে। ’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)

জীবনের সেই অন্তিম মুহূর্তে অন্তর থেকে দুনিয়ার সব আশা-আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে যাবে। জীবনের ভালো কাজগুলোই কেবল চোখের সামনে আসবে। আর তা না থাকলে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হবে। তবে তখন কিছুই করার থাকবে না। কাফেররা তখন বলবে, ‘আহ, আমি যদি কোনো ভালো কাজ করতাম!’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১০০)

আবার অনেকে আফসোস করতে করতে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাকে আরেকটু সময় দিলে  সত্যবাদিদের অন্তর্ভূক্ত হতাম এবং ভালো কাজ করতাম!’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৩৭)

তবে যারা ঈমান এনেছে দুনিয়াতে এবং জীবনে আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলেছে, মৃত্যুর সময় তাদের কাছে ফেরেশতা এসে অভ্যর্থনা জানাবে। আল্লাহ তাআলা তাদের বলেন, ‘আর যারা বলবে আমাদের রব আল্লাহ এবং এর ওপর অটল থাকবে, তাদের কাছে ফেরেশতারা নেমে এসে বলবে, তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। ’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৩০-৩২)

জীবনের এ সঙ্গীন মুহূর্তে সাহাবাদের একজনের ঘটনা আপনাদের বলছি। সালমান (রা.) জীবনের সয়াহ্নে এসে পৌঁছলে, সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) কুফা থেকে তাকে দেখতে আসেন। তিনি এসে দেখলেন, সালমান (রা.) কাঁদছেন। সালমানকে সালাম দিয়ে সাদ পাশে বসে বললেন, ‘আমার প্রিয় ভাই, কাঁদছেন কেন? রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে থাকার কথা কি আপনার স্মরণ নেই? বড় বড় যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা কি আপনার স্মরণ নেই?’ সালমান (রা.) বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা কিংবা আল্লাহর সাক্ষাত অপছন্দ হওয়ার দরুন কাঁদছি এমন নয়। ’ সাদ (রা.) বললেন, ‘তাহলে আপনি কেন কাঁদছেন?’ সালমান (রা.) বললেন, ‘আমাকে কাঁদাচ্ছে, আমার প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আমার একটা অঙ্গীকার ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘সফররত আরোহীর পাথেয়ের মতো যেন তোমাদের প্রত্যেকের দুনিয়ার সম্বল হয়। ’ আমরা আশঙ্কা করছি, হয়ত সে ক্ষেত্রে আমরা সীমালঙ্ঘন করেছি!’

একজন বিখ্যাত সাহাবি এমনটি আশঙ্কা করছেন। আর আমরা যারা সত্যিই দুনিয়ার জীবনে সীমালঙ্ঘন করেছি, তাদের কী অবস্থা হবে? তাই জীবন থাকতেই সময়কে মূল্যায়ন করা চাই। আগে থেকে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনারা অবশ্যই সবকিছুই করতে সক্ষম। কবরের মৃত ব্যক্তিরা কিছুই করতে পারে না। তাই মৃত্যু আসার আগেই সুস্থতা ও অবসর সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিন। আমাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস যেন আল্লাহর আনুগত্যে অতিবাহিত হয়। এখন থেকেই যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মতো জীবন গড়বে, আল্লাহ তাদের অতীতের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। সুন্দর করবেন আগামীর দিনগুলো।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সব কাজের শেষ পরিণতি সুন্দর করুন। দুনিয়ার লাঞ্চনা ও আখেরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা আমাদের জন্য সহজ করুন। আপনি সন্তুষ্ট থাকাবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিন। আমিন।

মক্কা মুকাররামার পবিত্র মসজিদুল হারামে (১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪০ হিজরি মোতাবেক ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) প্রদত্ত জুমার খুতবাটি অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ

অনুবাদক: তরুণ আলেম, গবেষক-গ্রন্থকার

ইসলাম বিভাগে লিখতে পারেন আপনিও। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।