জাদুঘরটি বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন। দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোয় তৈরি এই জাদুঘরে রয়েছে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
জাদুঘরের স্থান, স্থপতি ও আয়তন
জাদুঘরটি নকশা এঁকেছেন চীনা বংশোদ্ভূত এক মার্কিন স্থপতি। আইএম পাই নামের ওই স্থপতি ৯১ বছর বয়সে সুবিশাল এই জাদুঘর ভবনের নকশা করেন। জাদুঘরটি ৪৫ হাজার বর্গমিটার জায়গার উপর অবস্থিত।
চূড়ান্ত নকশা করার আগেই তিনি বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভ্রমণ করেন। প্রায় ছয় মাসের ভ্রমণে তিনি বিভিন্ন জাদুঘর ও মুসলিম স্থাপত্য পরিদর্শন করেন। ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করেন।
সবশেষে দোহা উপসাগরের তীরের একটা স্থান জাদুঘরের জন্য নির্বাচন করেন। একটু দূরে ও সাগরের তীর বেছে নেওয়ার কারণ, ভবিষ্যতে যেন কোনো উঁচু স্থাপনার কারণে ভবনটিকে ঢেকে না পড়ে।
জাদুঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০০ সালে। ছয় বছরের মাথায় নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০০৮ সালে।
জাদুঘরের আয়তন
জাদুঘরের উচ্চতা পাঁচতলা। অভ্যন্তরে জায়গা রয়েছে প্রায় চার লাখ স্কয়ার ফিট। ভেতরের অংশগুলো অভাবনীয় ও অদ্ভুতভাবে কাচে সাজানো। একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে ব্যবহার হয় কাচের তৈরি সিঁড়ি। মাঝখানে রয়েছে ১৬৪ ফুট উঁচু গম্বুজ।
জাদুঘরের বিন্যাস যেভাবে
বিভিন্ন যুগ অনুযায়ী ইসলামী ইতিহাসের আলাদা গ্যালারি রয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগের জন্য রয়েছে আলাদা শিল্প গ্যালারি। মধ্য এশিয়া ও ইরানের ১২-১৬তম শতাব্দীর স্থাপত্যশিল্পের জন্য দুইটি আলাদা গ্যালারি।
মিসর ও সিরিয়ার ১২-১৫তম শতাব্দীর স্থাপত্যশিল্পের জন্য দুটি আলাদা গ্যালারি। রয়েছে ইরানের ১৬-১৯ শতকের আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের আলাদা গ্যালারিও।
জাদুঘরে যা কিছু সংরক্ষিত রয়েছে
আরব ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র, শিলালিপি, তৈজসপত্র, গহনা, অস্ত্র, বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে এতে।
ধাতব বস্তু, কারুশিল্প সামগ্রী, কার্পেট, পাথর, সিরামিক পণ্য, কোরআনের দুর্লভ পাণ্ডুলিপি, মুদ্রা, জুয়েলারি, অস্ত্র, কয়েন, কাচের জিনিসসহ ইসলামীশিল্পের নানা নিদর্শন। এছাড়া পাঠাগারে শিশুদের পৃথক পাঠ কর্নার স্থাপন করা হয়েছে।
আশ্চর্যকর হলো, জাদুঘর ভবনেই একটি সমৃদ্ধ জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। যাতে আরবি ও ইংরেজি ভাষার দেড় লাখের বেশি বই রয়েছে। এবং প্রায় ২০০ কপি প্রাচীন ও বিরল বই রয়েছে, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না বরে এক প্রকার নিশ্চিত।
জাদুঘরে গিফট শপ ও অন্যান্য
জাদুঘরে কমপ্লেক্সে রেস্টুরেন্ট, গিফট শপ ও বহিরাঙ্গনে উন্মুক্ত পার্ক রয়েছে। রেস্টুরেন্টে আরবি, ফরাসি, ভূমধ্যসাগরীয় ও আবর ব-দ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা রকম খাবার-পানীয় পাওয়া যায়।
জুয়েলারি, বই, ঘরসজ্জার বিভিন্ন জিনিসপত্র, রাজকীয় মশাল ও মোমবাতি, দৃষ্টিনন্দন ও ঐতিহ্যের আদলে তৈরি শো পিসসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র গিফট শপে রয়েছে। কাতারের মার্কেটগুলোর তুলনায় মোটামুটি স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় এসব।
দর্শনার্থীদের কেনাকাটা ও অন্যান্য সুবিধার্থে আর্থিক লেনদেনের জন্য এটিএম বুথ রয়েছে। যোগাযোগের জন্য ফ্রি ওয়াই-ফাই কানেকশন, ফ্রি গাইড লাইন ও অভ্যর্থনা-তথ্য অনুসন্ধান কেন্দ্রও রয়েছে।
জাদুঘর সীমানায় ও মূল ভবনের অনতিদূরে দুই লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটারের বিশাল পার্ক রয়েছে। এটি সাধারণ মানুষের জন্য দৈনিক ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।
ইসলাম বিভাগে আপনিও প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এমএমইউ