ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

তুর্কিতে ইসলামী-জ্ঞান আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশি গবেষক

মুফতি মুহাম্মাদ মিনহাজ উদ্দিন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯
তুর্কিতে ইসলামী-জ্ঞান আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশি গবেষক

তুরস্কের প্রাচীন ও বিখ্যাত শহর ইস্তাম্বুলে ‘হিজরি প্রথম শতাব্দীতে ইসলামী জ্ঞান’ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের গবেষকদের পাশাপাশি বাংলাদেশি গবেষক হোসাইন মোহাম্মদ নাইমুল হকও অংশ নেবেন।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) গবেষক হোসাইন মোহাম্মদ নাইমুল হক বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে তার প্রবন্ধের বিষয় ‘হিজরি প্রথম শতাব্দীতে উসুলুল ফিকহের (ইসলামী ফিকহের বুনিয়াদি নীতি) রূপরেখা’।

ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ও শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।

মনস্বী ও ধীমান গবেষক হোসাইন মোহাম্মদ নাইমুল হক। জ্ঞান-যোগ্যতা ও কর্মে বিভাময় সজ্জন। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএউচডি গবেষণা করছেন। পাশাপাশি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট’র গবেষণা-কর্মকর্তা।

কাতারের আমির শায়খ তামিম বিন হামাদ আলে-থানির হাত থেকে স্বর্ণপদক নিচ্ছেন নাইমুল হক।

হোছাইন মুহাম্মদ নাঈমুল হক বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। বাংলা, আরবি ও ইংরেজিতে সমানভাবে পারদর্শী। আরবিতে তাঁর লেখনশৈলী ও বাচনভঙ্গি বেশ উচ্চমার্গীয়।

মধ্যপ্রাচ্যের প্রসিদ্ধ লেখক ও গবেষক শায়খ ড. নায়েফ বিন নাহার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুকওয়ালে নাইমুল হকের থিসিস সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত হয়ে লেখেন- ‘যদিও আমি শায়খ নাঈমের সুপারভাইজার। তবে সে আমার কাছ থেকে যেটুকু উপকৃত হয়েছে আমি তারচে’ বেশি উপকৃত হয়েছি!!

শায়খ নাঈম একজন ফকিহ ও শক্তিশালী কলমের অধিকারী। মনে পড়ে, আমি যখন গ্রাজুয়েশন স্টাডিবোর্ডের সদস্যদের সামনে তার থিসিস-পরিকল্পনা পেশ করি, তারা মন্তব্য করেছিলেন- এই পরিকল্পনা তো কোনো ডক্টর তৈরি করেছেন—শিক্ষার্থী তৈরি করে নি!

তাছাড়া তার স্বতন্ত্র এষণা-গবেষণার যোগ্যতা আছে। তার থিসিসে “সুদি ব্যাংক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাখাগুলোর বিষয়ে—সে চমৎকারভাবে আমার মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এবং তার মতের স্বপক্ষে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করে...’

পড়াশোনা ও শিক্ষা
নাইমুল হক বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়ার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ২০০১ সালে তিনি সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর ২০০৫ সেখান থেকে (ছানুভিয়া বা উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে পড়াকালীন) কাতারের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্যে কাতার গমন করেন। নাইমুল হক এখনও জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া দারুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়া ও সেখানকার শিক্ষকবৃন্দের প্রতি অকুন্ঠ ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করেন।

২০০৯ সালে কাতার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে অনুষ্ঠিত এইচ এস সি পরীক্ষায় আর্টস বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তখন বিশ্ববিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ‘আল-জাজিরা’ তার কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে চান। কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ও আল-জাজিরার উপস্থাপিকা অশালীন পোশাকধারী হওয়ায় তিনি সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানান।

২০১০ সালে বাংলাদেশের বেফাকুল মাদারিসের তত্ত্বাবধানে ‘দাওরা হাদিস’ পরিক্ষায় দারুল উলূম হাটহাজারি থেকে অংশ নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। একই বছর কাতার ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপ লাভ করেন।

২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এ মাসের শুরুতে ফিকহ-বিভাগ থেকে এমফিল ডিসকাশন সম্পন্ন হয়। এমফিলে তার বিষয়বস্তু ছিলো ‘একাধিক জিম্মায় হারাম সম্পদের হুকুম; একটি ফিকহ-উসুলি গবেষণা ও সূদীব্যাংক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাখাগুলোর উপর তার প্রয়োগ। ’

যেসব পুরস্কার-পদক অর্জন করেছেন
♦ ২০১৪ সেশনে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া ফ্যাকাল্টির সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে কাতারের আমির শায়খ তামিম বিন হামাদ আলে-থানির হাত থেকে স্বর্ণপদক লাভ।

♦ কাতার শিক্ষামন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবিষয়ক উচ্চতর পরিষদের পক্ষ থেকে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচিত হন এবং পুরস্কারে ভূষিত হন। (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সামগ্রিকভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। )
♦ কাতার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ও নেশাজাত বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ‘নেশার লক্ষণ ও প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও কাতার ইউনিভার্সিটি ও মা’হাদ দ্বীনি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু পুরস্কারে অভিষিক্ত হন।

বর্তমান কর্ম ও ব্যস্ততা
♦ কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট’র গবেষণা-কর্মকর্তা
♦ কাতার ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব।
♦ কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক।

রচনা ও গ্রন্থাবলী
♦ রোহিঙ্গা। আরবি উপন্যাস। লেবাননের বৈরুতস্থ ‘দারু ওয়াহয়িল কলম’ থেকে প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন।
♦ মাআলিমা ফিত তারিক। এটি মূলত সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর (রহ.) বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পা জা চুরাগে জিন্দেগি’র (জীবন পথের পাথেয়) আরবি অনুবাদ। লেবাননের বৈরুতস্থ ‘দারু ওয়াহয়িল কলম’ থেকে প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন।
♦ গল্পে গল্পে উসুলুল ফিকহ। এটি মাদরাসার প্রাথমিক স্তরের উসুলুল ফিকাহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য গল্পের আঙ্গিকে রচিত।  
♦ বিচারপতি মাওলানা তাকি উসমানি লিখিত ‘ইন্ট্রুডাকশন অব ইসলামিক ফাইন্যান্স’ বইটি ইংরেজি থেকে আরবিতে অনুবাদ করেছেন।
♦ এছাড়াও ধর্ম, শরিয়া, রাজনীতি, ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ক ছোট-বড় প্রায় পঁচিশটি গবেষণা প্রবন্ধ তৈরি করেছেন।

আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উত্তোরত্তর কর্মমুখর ও সাফল্যময় উপহার দিতে তিনি বদ্ধপরিকর। আরব ও বহির্বিশ্বে দেশের মান বাড়াতে তার অবদান ও প্রচেষ্টা আরও প্রাগ্রসর এবং অত্যুজ্জ্বল হোক। মহান আল্লাহ তাকে সামগ্রিক কল্যাণের তাওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লেখা-প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।