আবহমানকাল থেকে আরবে রবিউল আউয়াল বসন্তের সূচনাপর্ব হিসেবে স্বীকৃত। কালের পরিক্রমায় এই মাস ও বসন্তের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়।
এ মাসেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তার আগমনে প্রকৃতি-বিহারে আনন্দের হিল্লোল জেগেছিল। কিন্তু পরম দুঃখের কথা হলো, এ মাসেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর সান্নিধ্য গ্রহণ করেন। ফলে ফিরে ফিরে রবিউল আউয়াল এলে মুমিনের হৃদয়ে প্রিয় নবীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সামগ্রিক জীবন-বৃত্তান্ত ভেসে ওঠে।
আর প্রসঙ্গতই অন্যান্য মাসের তুলনায় বিশ্বের মুসলমান এই মাসে মহানবী (সা.)-এর স্মরণ একটু বেশিই করেন। তাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা ও স্তুতিগাথা রচনা হয়। বিভিন্ন প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সিরাত বা তার জীবনবিষয়ক গ্রন্থ রচনা করা হয়। তার স্বর্ণালি-বর্ণালি জীবনালেখ্য নিয়ে বিভিন্ন পরিসরে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে আয়োজন করা হয়।
১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মুসলিম দেশগুলো (কিছু অমুসলিম দেশেও) সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে আরবদেশ ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য মুসলিম দেশগুলোতে মিলাদুন্নবীর চেয়ে সিরাতুন্নবীর আলোচনাই বেশি হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশেও ১২ রবিউল আউয়াল সরকারিভাবে ছুটির প্রচলন রয়েছে। এবার বাংলাদেশে পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল হবে আগামী ১০ নভেম্বর ২০১৯।
সর্বাধিক প্রণিধানযোগ্য কথা হলো, মহানবী (সা.)-এর আদর্শ, প্রেম-ভালোবাসা কোনো বিশেষ দিনের সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়। কোনো একক মাস বা তারিখের চৌহদ্দিতে বন্দি নয়। বরং তার আদর্শ ও ভালোবাসা নিত্য দিনের অপরিহার্য অনুসঙ্গ হওয়া অত্যাবশক।
তার যুগোপযোগী আদর্শের সামনে অন্য যেকোনো ধরনের আদর্শ গৌণ। তার আদর্শ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বোৎকৃষ্ট মানবতা ঘনিষ্ঠ আদর্শ। যার তুলনা শুধুই তার ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ বা সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। পৃথিবীর উদার চিন্তাশীল মহল একবাক্যে তা স্বীকার করে। মার্কিন লেখক মাইকেল এইচ হার্ট যুক্তিসঙ্গত কারণেই মহানবী (সা.)-কে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের স্থান দিয়েছেন।
বস্তুত চিন্তাকর্ম ও অবদানের বিচারে মাইকেল এইচ হার্ট তা দিতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও তার এ দেওয়া বা না দেয়া মহানবী (সা.) এর সাফল্যের মানদণ্ড বা মাপকাঠি নয়।
মহান আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ বিচার দিবসের আশা রাখেন এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করেন, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)
আর মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা এবং তার প্রতি প্রেমের পুষ্পমাল্য ও মোহন-শ্রদ্ধার্ঘ্য পেশ করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবেনা, যতক্ষণ তার কাছে তার সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও সমগ্র মানবতার চেয়ে অধিক প্রিয় না হবো। (বুখারি, হাদিস: ৫০২৯)
বিশ্বনবী (সা.) মৃত্যুর সময় কেবল কিছু গৃহস্থালি ও যুদ্ধাস্ত্র রেখে গিয়েছিলেন। আর রেখে গিয়েছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত-কালজয়ী আদর্শ। সুতরাং মানবতার প্রতিটি ক্ষণে, স্মরণে-মননে এবং জীবন পরিক্রমার প্রতিটি পর্ব ও অঙ্গনে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নাহ্। রয়েছে তার জ্যোতিময় ও দীপ্তি ছড়ানো সুমহান নিয়ম-পদ্ধতি ও রীতি-নীতি। তাই তার সতত ও ধ্রুপদী আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করেই কেবল একজন মুমিনের ‘নবীপ্রেমের ষোলকলা’ পূর্ণতা পেতে পারে।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
এমএমইউ