পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে: এক সময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলা হতো রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন!
দেশের মিডিয়া এমনকি আন্তর্জাতিক মিডিয়াও ফলাও করে প্রচার করে সে খবর।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ যেসব দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছে- যার কিছু কিছু পীরগঞ্জবাসী কখানো কল্পনাও করেনি।
উপজেলার পাটগ্রামে স্থাপিত হচ্ছে মেরিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজ সমানতালে এগিয়ে চলছে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলার পশ্চিম প্রান্তে টুকুরিয়া ইউনিয়নে স্থাপন করা হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এরই মধ্যে একনেক অনুমোদন দিয়েছে, শিগগিরই ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। আলোচনায় রয়েছে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই না-কি এ বিষয়ে আগ্রহী।
মকিমপুর গ্রামে স্থাপিত হচ্ছে পুষ্টি ইনস্টিটিউট। এর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে মাদারগঞ্জে স্থাপন করা হয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল। এছাড়া ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে খালাশপীরেও ১০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। আরও দু’টি মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
উপজেলাবাসীদের প্রাণের দাবি ছিলো শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজকে সরকারিকরণ করা। সেই দাবিও ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। কেবল তাই নয়, স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেশ ক’টি বিষয়। ফলে বাড়িতে থেকেই ছেলে মেয়েরা স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পড়তে পারছে।
নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হচ্ছে সুদমুক্ত বিশেষ ঋণ সুবিধা। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক সরকারি বিক্রয় কেন্দ্রও রয়েছে।
দাবি উঠেছিলো পীরগঞ্জকে পৌরসভা করার- তাও হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন হয়ে গেছে পীরগঞ্জ পৌরসভার।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নব-নির্বাচিত মেয়র ও প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা মিয়া মোহাম্মদ তাজিমুল ইসলাম শামীম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পিছিয়ে থাকা পীরগঞ্জকে বঙ্গন্ধুর কন্যা টেনে তুলেছেন। তিনি নিজেই উন্নয়নের দেখভাল করছেন।
উন্নয়ন সবে শুরু হয়েছে। এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, মৎস্য ইনস্টিটিউট, আইটি পার্ক, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হযেছে। পীরগঞ্জ হবে একটি মডেল উপজেলা।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন হয়েছে। আগে যেসব রাস্তা কাদায় পরিপূর্ণ থাকতো, সেসব রাস্তায় এখন দুরন্ত গতিতে চলছে গাড়ি। পীরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা শহরের যোগযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে নির্মাণ করা হচ্ছে আঞ্চলিক মহাসড়ক। সম্প্রতি প্রকল্পটির জন্য অর্থ ছাড় করা হয়েছে।
অনেক আগেই নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন।
স্থানীয়দের মতে, এসব উন্নয়ন এবং জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এরশাদের লাঙ্গল। এখন সবার মুখে নৌকার জয়গান। রংপুরে নৌকার পালে হাওয়া অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই লাগতে শুরু করে।
ওই নির্বাচনে জাপার দুর্গখ্যাত রংপুরে তিনটি আসনে (পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগাছা-কাউনিয়া) আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। এরপর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়জয়কার হয়। তবে মাদকের উৎপাত ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ত্রাণ ও টিআর, কাবিখা, এডিপি নিয়ে নয়ছয়ের কারণে কিছুটা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বরাবরই রংপুরে বিএনপি’র অবস্থা নাজুক। অধিকাংশ সময় বিএনপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। পীরগঞ্জে অবস্থা আরও খারাপ। গত পৌর নির্বাচনে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মেয়র পদপ্রার্থী ছিলেন। তিনি ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ১০৪টি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬
এটি