ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

এরশাদের উত্থান-পতন

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
এরশাদের উত্থান-পতন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি

ঢাকা: রক্ত স্বল্পতা ও শ্বাসকষ্ট সমস্যার কোনো উন্নতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার (১৪ জুলাই) সকাল পৌনে আটটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

একটানা ৮ বছর ক্ষমতার শীর্ষস্থানে ছিলেন এরশাদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হন তিনি।

মৃত্যুকালে সাবেক এই সেনাপ্রধানের বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
 
যেভাবে উত্থান
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।  

১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে তিনি দেশ শাসন করেন। ওইদিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ এফ এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন।
 
এরশাদ দেশে প্রথম উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। তার ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয়। এরপর জনভিত্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন তৎকালীন এই সামরিক শাসক।

বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা
রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এরশাদ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় পার্টি। পরবর্তীতে এই দলের চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেন। ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ তার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ৭ ও ১৫ দলীয় জোটকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানালে সাড়া দেন এরশাদ।  

নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও এরশাদ প্রেসিডেন্ট 
১৫ দলীয় জোটের পাঁচটি দল ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে বিজয়ী হয়। আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ৭৬টি আসনে।  

এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্দেহ ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। প্রেসিডেন্ট এরশাদের পদত্যাগের দাবিতে ১৯৮৭ সালে দেশব্যাপী রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে।  

এ পরিস্থিতিতে ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। পুনরায় জাতীয় পার্টির সরকারের অধীনেই ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। এবারও আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান সব বিরোধী দলই এ নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১ আসনে বিজয়ী হয়।  

১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরশাদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনও বিএনপি এবং আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল বর্জন করে।

এরশাদের পতন
দেশজুড়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ১৯৮৯ সালে পুনরায় শুরু হয়। এ অবস্থায় তিনি দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।  

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন এরশাদ। ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিদায় নেন; অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ। পরে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রেফতার হন।  

তখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন মিজানুর রহমান চৌধুরী।  

রাজনীতিতে আলোচনায় এরশাদ
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। ওই সময় ৩৫টি আসন নিয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দলটি।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩২টি আসন লাভ করে।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এরশাদ কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর কারাবন্দি থাকার পর ১৯৯৭ সালে ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান এরশাদ। তবে আদালতের রায়ে দন্ডিত হওয়ার কারণে সংসদে তার আসন বাতিল হয়ে যায়।  

এরপরও রাজনীতিতে আলোচিত থাকেন এইচ এম এরশাদ। এর মাঝে ২০০০ সালের দিকে এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে মূল জাপার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি নিজেই।  

শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন বেশকিছু দিন আগেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন। তিনি হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত।  

দাম্পত্য জীবনে এরশাদ ও রওশনের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ সাদ (সাদ এরশাদ) ও এরশাদ-বিদিশার পুত্র এরিক এরশাদ রয়েছেন। এছাড়া এরশাদের একজন পালিত কন্যা রয়েছেন, তার নাম অনন্যা হোসাইন মৌসুমী।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
এসই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।