ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

যেভাবে পতন হয় এরশাদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
যেভাবে পতন হয় এরশাদের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনতার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন হয়েছিল। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন।

স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতার মসনদ থেকে হঠাতে ৯ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিসর্জন দিতে হয়েছে অসংখ্য তাজা প্রাণ।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। এরপর থেকে এরশাদ দেশের রাজনীতিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে গণবিরোধী ধারার কার্যক্রম চালাতে থাকেন।

ক্ষমতা দখল করে একটি সামরিক আইন জারি করেন তিনি। যে আইনে আকারে-ইঙ্গিতে কেউ তার সামরিক শাসনের সমালোচনা বা বিরোধিতা করলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

সামরিক শাসক স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রথম থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এরশাদের ক্ষমতা দখলের প্রথম দিন থেকেই (২৪ মার্চ ১৯৮২) বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কলাভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে এদিন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর তিন নেতা গ্রেফতার হন। সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সেদিন থেকে ছাত্ররা এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন।

১৯৮২ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। সাভার সেনানিবাস থেকে মিছিলের খবর শুনে সেনাবাহিনী চলে আসে। স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চলে নির্যাতন।

একই বছরের ৮ নভেম্বর মধুর ক্যান্টিনে ১৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি সুশৃঙ্খলভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। মিছিলের প্রথম ভাগে শতাধিক ছাত্রী ছিল। সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে হাইকোর্টের কাছে মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ শুরু করে। সাধারণ ছাত্ররাও তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এরপর ছাত্রদের ওপর চলে গুলিবর্ষণ। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল, জাফর, দীপালি সাহা। জয়নালকে গুলিবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

এরশাদ তার ৯ বছরের শাসনকালে আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিহত করতে কতো মানুষকে যে হত্যা করেছে তার সঠিক হিসাব নেই। তার শাসনকালের পুরো সময়েই (১৯৮২-৯০) বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম-হরতাল-ঘেরাও কর্মসূচিতে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঢল নেমেছিল।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নুর হোসেন, যার বুকে পিঠে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ডা. শামসুল আলম মিলন, কমরেড তাজুল, যুবনেতা টিটো, জেহাদ, সাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিম সেলিম, ঢাকা পলিটেকনিকের ছাত্র মনিরুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা ময়েজ উদ্দিনসহ অগুণতি মানুষের রক্তের স্রোতে ভিজে গিয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ।

১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন শুরু হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল ও বামপন্থীদের ৫ দলীয় জোট এবং ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৪ ডিসেম্বর রাতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। পরেরদিন তিন দলীয় জোটের সকল রাজনৈতিক দলের অনুরোধে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণে সম্মত হন।

৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যার মাধ্যমে সামরিক শাসক স্বৈরাচার এরশাদের পতন হয়।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর শুধুমাত্র স্বৈরাচারের পতন দিবস নয়, দিনটি গণতন্ত্রেরও বিজয় দিবস।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
আরকেআর/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।