ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

কুমিরের জানা অজানা

সানজিদা সামরিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৩
কুমিরের জানা অজানা

কুমির ভয়ঙ্কর এক সরীসৃপ প্রাণী। এদের উ‍ৎপত্তি অতি প্রাচীন কালে।

  ধারণা করা হয় ডাইনোসর যুগের পর এরা অল্পই পরিবর্তিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এরা প্রায় ২০ কোটি বছর আগের প্রাণী। অথচ, ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে ৬.৫ কোটি বছর আগে। অর্থাৎ কুমির বড় বড় বিলুপ্তির পর্যায়গুলো পার হয়ে এসেছে।

এখন জানা যাক কুমিরের জানা অজানা নানা তথ্য:


কুমিরের বাসস্থান

কুমির উষ্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পছন্দ করে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া তাদের মোটেও ভালো লাগে না। এ কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও বর্নিয়, ভারত ও পাকিস্তানের জলাভুমিতে এদের বেশি দেখা যায়।


শিকারি কুমির

শিকারি হিসেবে কুমির ভীষণ দক্ষ। তারা পানির নিচে ওৎ পেতে থাকে। শিকার কাছাকাছি এলেই তার ধারালো দাঁত বিদ্ধ করে পানিতে ক্রমাগত পাকাতে থাকে।

কুমিরের শিকারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন সরীসৃপ, মাছ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। কুমিরের পাকস্থলিতে অনেক সময় পাথর পাওয়া যায়। কারণ পাথর তাদের খাবার হজমের ক্ষেত্রে ও পানিতে চলাচলের সময় ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরীসৃপ লোলং কুমির

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরীসৃপ অস্ট্রেলিয়ার লোনা পানির লোলং কুমির। এর জন্মস্থান অস্ট্রেলিয়া। বৈজ্ঞানিক নাম ক্রোকোডাইলাস পোরোসাস। ২০১১ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ান কুমির বিশেষজ্ঞ ডক্টর অ্যাডাম ব্রিটন পরিমাপ করে নিশ্চিত করেন লোলং কুমিরই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমির।

প্রাপ্ত বয়স্ক লোলং পুরুষ কুমিরগুলো সাধারণত ৩.৯ থেকে ৫.৫ মিটার হয়। এর ওজন তেরশ’ ষাট কেজির বেশিও হয়। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, লোনা পানির এই কুমির সর্বোচ্চ ২৩ ফুট এবং ওজনে দুই হাজার কেজির বেশির হয় না।   এই রিপোর্টটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড দ্বারা স্বীকৃত।

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কুমির ডোয়ার্ফ

পশ্চিম আফ্রিকার ডোয়ার্ফ কুমির পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট আকৃতির কুমির। এর বৈজ্ঞানিক নাম ওসটেওলায়েমুস টেটরাসপাস। এখন থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে এই কুমিরের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৮৬০ সালে প্রথম এই কুমির আলোচনায় আসে। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে কঙ্গো নদীর উজান অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। ধীর, স্থির, নিশাচর ও ভীরু এই কুমিরের বাসস্থান পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিচুভূমিতে।

একটি বয়স্ক ডোয়ার্ফ কুমির ১.৫ মিটার (৫ফুট) থেকে ১.৯ মিটার (৬.২ ফুট) পর্যন্ত  লম্বা হয়। এদের ওজন য় ১৮ থেকে ৩২ কেজির মধ্যে। বয়স্ক  ডোয়ার্ফ কুমিরের শরীরের উপরিভাগে কালচে ভাব রয়েছে। দু’পাশে হলদেটে ভাব ও নিচের অংশে কোথাও কোথাও কালো দাগ আছে। কমবয়সীদের মাথা ও লেজ  হলদেটে আর পুরো শরীর বদামি রঙে আচ্ছাদিত।

কুমির যখন পোষা প্রাণী

অস্ট্রেলিয়ায় পোষা প্রাণী হিসেবে কুমির অনুমোদনপ্রাপ্ত। তবে নর্দান টেরিটোরিতে স্বাদু বা লোনা পানির কুমির পোষার ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রয়োজন হয় এবং এটি ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা না হওয়া পর্যন্ত রাখা যায়। ভিক্টোরিয়াতে বাড়িতে কুমির প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী পোষার ব্যক্তিগত লাইসেন্স থাকার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া তাদেরকে নিজের ও প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার বিভিন্ন ধরনের নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়।

কুমিরের ফার্ম

মালয়েশিয়ার ল্যাংকাউই ক্রোকোডাইল ফার্ম হাউসে  পৃথিবীর বিভিন্ন ধরনের বড় বড় কুমির সংরক্ষিত আছে। এখানে সংরক্ষিত আছে এক হাজারেরও বেশি কুমির। ১৯৫০ সালে স্থাপিত থাইল্যান্ডের সামুট প্রাকার্ন ক্রোকোডাইল ফার্ম এন্ড জু বিশ্বের অন্যতম বড় ক্রোকোডাইল ফার্মের একটি। এখানে ষাট হাজারের বেশি স্বাদু ও নোনা পানির কুমির সংরক্ষিত আছে।

আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যে ১৮৯৩ সালে স্থাপিত সেন্ট অগাস্টিন অ্যালিগেটর ফার্ম জুওলোজিক্যাল পার্ক অতি পরাতন একটি ফার্ম। এখানে প্রায় ২০ প্রজাতির কুমির রয়েছে। ৮১৬ কেজি ওজনের গোমেক নামের কুমিরটি আমেরিকার বন্দি কুমিরদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এর দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট।

২০০৩ সালে  বাংলাদেশেও কুমির চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় এই প্রজেক্ট চালু আছে।

কুমিরের জীবনকাল

একটি কুমির সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ বছর বেঁচে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্র দেখা গেছে কোনো কোনো কুমির ১৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল।

১৯৬০ সালে বাণিজ্যিকভাবে কুমির সংরক্ষনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তখন শুরু হয় বন্য কুমিরের ডিম সংগ্রহ ও চাষের প্রক্রিয়া।

কুমিরের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ও শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা  পূরণে এমন জায়গা নির্বাচন করা হয় যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছে।

কুমিরের মাছ, মাংস, ওয়াটার বার্ডস, ব্যাঙ, টিকটিকি জাতীয় প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে।

এক নজরে কুমির:

•  কুমিরের পিঠের চামড়ার ভেতর হাড়ের মতো শক্ত পাত (osteoderms) থাকে।

•  বড় তুণ্ড, চোয়াল সজোরে বন্ধ হয় কিন্তু খোলার পেশি তত জোরালো নয়।

• এরা ঘাড় বিশেষ বাঁকাতে পারেনা।

•  জিহ্বা মুখের বাইরে বের করতে পারেনা। জিভের নিচে প্রধান লবণ রেচন গ্রন্থি।

•  বিশাল লেজ পাশাপাশি চ্যাপ্টা- সাঁতারের প্রধান অঙ্গ, ও লড়াইয়ের অস্ত্র। পিঠে দুইসারি কাঁটা পায়ুর কাছাকাছি এসে একটি সারিতে পরিণত হয়।

•  চার পা, হাঁসের মত লিপ্তপদ (web footed)

•  ডুব  দেওয়ার সময় কান বন্ধ করতে পারে।

•  মুখবিবর ও নাসিকাপথ আলাদা করার জন্য দ্বিতীয় তালু (টাকরা/ secondary palate)- তাই মুখে খাবার নিয়েও সহজে শ্বাস নিতে পারে।

•  একমাত্র সরীসৃপ যার চারকক্ষ হৃৎপিণ্ড (ভ্রণাবস্থায় পুরো পৃথক হবার পর অলিন্দদ্বয়ের মধ্যের দেওয়ালে আবার সামান্য ফাঁক তৈরি হয়- ফোরামেন অফ প্যানিজ্জা। জলে ডুব দেবার সময় এটি খোলা হয়- তখন রক্ত ফুসফুসে যায়না।

•  একমাত্র সরীসৃপ যার দাঁত স্তন্যপায়ীদের মতো হাড়ে শেকড়-গাথা

বাংলাদেশ সময় : ১৫৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৩

সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।