ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মিষ্টি রোদে সূয্যি মামা | কিঙ্কর আহ্সান

গল্প / ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৪
মিষ্টি রোদে সূয্যি মামা | কিঙ্কর আহ্সান

সূয্যি মামাটা তখন অনেক দূরের দেশে থাকে।
অনেক অনেক দূর।

সে দূরত্ব ঠাওর করার সাধ্যি আমাদের নেই।
সূর্যের আকারটা ছিল তখন চৌকো। মস্ত চারকোণা এক বাক্সের মতন। নিজ দেশ থেকে গুটি গুটি পায়ে রওনা দিত সে পৃথিবীর দিকে। কতই না কষ্ট হতো তখন। আসতেও লেগে যেত অনেকটা সময়। দিন রাত তাই দীর্ঘ হয়ে যেত খুব। তাই বলে সূর্যের ওপর মানুষের রাগ ছিল না একটুও। সূর্যটা যে লক্ষ্মী অনেক। কত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে আসে। আহারে কতই না কষ্ট সূর্যটার। তারপরও বিরক্ত হয় না কারও ওপর। দিনভর মিষ্টি রোদ দিয়ে ভরিয়ে রাখে চারপাশটা। তাপ যেমন বাড়ে না তেমনি কমেও না।

সূর্যের কষ্ট হলেও মানুষ কিন্তু থাকে খুব শান্তিতে। কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। পড়াশোনা আর চাকরির মতন ঝুটঝামেলা নেই। সারাদিন কাটে গানবাজনা করে। কেউ কেউ পাখি দেখে সময় কাটায়। বুলবুলি, মোহনা, হালতী আরও নানান জাতের পাখি। সাতার কাটে পুকুরের স্বচ্ছ জলে। কখনও এমনি এমনি মন খারাপ হয় মানুষদের। তখন সবাই মিলে চলে যায় মেঘেদের কাছে। ছোট বড় অসংখ্য মেঘ নেমে আসে মাটিতে। বৃষ্টি হয়ে ঝ’রে মন ভালো করে দেয় সবার। খিদে পেলে সকলে মিলে করা হয় শিকার। সেদিন হয়তো হরিণ কিংবা কিছু খরগোশ মারা পড়ে। ধরা হয় মাছ।

আগুন জ্বালাতে জানে না কেউ। তাই তো শিকারের জিনিসগুলো নিয়ে যাওয়া হয় সূর্যের কাছে। সূর্যই পুড়িয়ে সেদ্ধ করে দেয় সব। সেদ্ধ করবার পর মানুষ সামান্য পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে খেয়ে নেয় পুরোটা। কিন্তু একটানা এ সুখের জীবন একঘেয়ে হয়ে ওঠে দিনকে দিন। একঘেয়ে জীবনে আচমকা মানুষেরা পায় একটি দুঃসংবাদ। ভয়াবহ দুঃসংবাদ। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সূর্য। কষ্ট করে সে আর আসতে পারবে না পৃথিবীতে। রাগ করেছে মানুষের ওপর। সূর্যটাই শুধু কষ্ট করে আর তারা থাকে শান্তিতে। এমনটা আর হতে দেয়া যায় না। রোজ রোজ একা এতটা পথ আসার মানে হয় না কোনো।

মানুষেরা আগে এমন বিপদে পড়েনি কখনও আর। সূর্য নেই তাই চাঁদেও আলো হয় না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে শিকার করারও উপায় নেই। কতক্ষণই বা সহ্য করা যায় আঁধার, কালো। সবাই মিলে ঠিক করলো অনুনয় বিনয় করে মান ভাঙাবে সূর্যের। কিন্তু অতটা পথ যাওয়ার যে কোনো উপায় নেই। যে যাবে সেই’ই তো মারা পড়বে। ইশ!— শাবল আর গাইতি দিয়ে সূর্যের শরীর কেটে কেটে যদি গোলাকার করে দেওয়া যেত। মন্দ হতো না তবে। সূর্যটা গড়িয়ে গড়িয়ে দ্রুত চলে আসতো পৃথিবীতে। রাগ থাকতো না আর কারও ওপর। এদিকে, সূর্যের এমন কাণ্ডকারখানায় ক্ষেপেছে অন্য গ্রহগুলো। কী দরকার এমন পাগলামীর! ছোট ছোট নিরীহ মানুষগুলো কত কষ্টই না করছে। সবাই মিলে তখন বের করলো দারুণ একটা বুদ্ধি। সূর্যটা যখন গভীর ঘুমে থাকবে, তখন বড় গ্রহগুলো সব চুপি চুপি সূর্যের পেছন গিয়ে একটা ধাক্কা দেবে সূর্যকে। সে ধাক্কায় গড়াতে গড়াতে পৃথিবীতে চলে যাবে সূর্যটা। যেই কথা সেই কাজ। পরেরদিনই ঘুমন্ত অবস্থায় জোরসে এক ধাক্কা দেয়া হলো সূর্যকে। ধাক্কাটা একটু জোরে হওয়াতে নিয়ন্ত্রণ হারালো সূর্যটা। গড়াতে গড়াতে থেতলে যেতে লাগলো শরীর। তারপর যখন পৃথিবীতে এসে পৌঁছালো, ততক্ষণে চৌকো শরীরটা তার হয়ে গেছে গোলাকার। গোলগাল শরীর পেয়ে সূর্যের আনন্দ আর দেখে কে! ধিনতা ধিনতা বলে শুরু করলো নাচ। নাচের সাথে ‘চৌকা থেকে হলাম গোল/ কি মজা! কি মজা! আনন্দে সব জয়ধ্বনি তোল। ’ বলে শুরু করলো গান। সূর্যের আনন্দে মানুষও খুশি।   রক্ষে হলো বিপদ থেকে।

এরপর থেকে এ পর্যন্ত অবশ্য কোনো ঝামেলা হয়নি। সূর্যও আসা বন্ধ করেনি আর। তবে গ্রহগুলোর ওপর একটু রেগে গিয়েছিল সূর্যটা। কত্ত বড় সাহস তাকে ধাক্কা মারে! তাপ দিতে দিতে হঠাৎ এ কথা মনে পড়লেই রেগে নিজের তাপ বাড়িয়ে দেয় সূর্যটা। মানুষের তখন কষ্ট হয় অনেক। আবার মানুষের কথা ভেবেই সময়মতো কমিয়ে ফেলে নিজের তাপ। সূর্যের এই পাগলামীতে মানুষের কোনো অভিযোগ নেই। কতই না কষ্ট করে বেচারা। এতটুকু পাগলামি না হয় করুক। সবসময়ের মিষ্টি রোদটা পাওয়া যায় না এখন আর। এতেই যা একটু মন খারাপ হয়— এই তো!

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।