ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বীর পিটার ও ভয়ঙ্কর দৈত্য |অর্ণব রহমান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪
বীর পিটার ও ভয়ঙ্কর দৈত্য |অর্ণব রহমান

ইউরোপের এক ছোট গ্রামে বসবাস করত পিটার নামের এক যুবক। পেশায় গ্রামের চৌকিদার।

সে ছিল একজন অতি সাধারণ মানুষ। কিন্তু তার একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল। গলাটা ছিল ভীষণ বাজখাঁই। গলায় ছিল প্রচণ্ড জোর।

এটা রাতের বেলায় তার চৌকিদারির কাজে তাকে সাহায্য করত। এদিকে এটা তার চৌকিদারির জন্য যত উপকারীই হোক না কেন, গাঁয়ের লোকজন তার এই বাজখাঁই গলা খুব অপছন্দ করত। অনেকের রাতের ঘুমের ব্যাঘাত হতো তার আওয়াজে। তখন কি আর কেউ জানত যে এই একটা বৈশিষ্ট্যই পিটারের জীবন বাঁচাবে এবং পিটারকে সম্মান উপহার দেবে!

একদিন সে রাতের মতো চৌকিদারি শেষ করে পিটার বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাড়ি ফেরার আগে শেষবারের মতো তার বিখ্যাত বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে চোর ডাকাতদের সাবধান করে বাড়ির পথ ধরল। এদিকে খুব কাছেই এক মাঠে ঘুমিয়ে ছিল ভয়ঙ্কর দর্শন এক বদমেজাজী দৈত্য। পিটারের বাজখাঁই চিৎকারে তার সাধের কাচা ঘুমটা গেল ভেঙে। ঘুমটা এভাবে নষ্ট হওয়ায় দৈত্য মারাত্মক খেপে গেল। সে প্রতিশোধ নেবার জন্য পিটারের বাড়িতে এসে পৌঁছালো।

ক্লান্ত অবসন্ন পিটার তখন সবেমাত্র বাতি নিভিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়েছে। এমন সময় তাকে পুরোপুরি চমকে দিয়ে তার সদর দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করল বিশালবপুর এক দৈত্য।

দৈত্য ঘরে ঢুকেই বিছানায় শোওয়া পিটারকে বলতে লাগলো, ‘তোর সাহস তো কম নয়, তুই আমার ঘুম ভাঙিয়েছিস। তুই জানিস আমি কে? অনেক জোর তোর ওই গলায় তাই না? আজ তোর ওই বাজখাঁই গলা ধড় থেকে আলাদা করে দেব। দেখি এরপর কীভাবে তোর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয়। তোর গলা আমি কেটে নেব। ‘

এই বলে দৈত্য ঘরের এক কোণে রাখা একটি বেশ বড় ধারালো ভোজালি টেনে নিল। ভোজালিটা ছিল বেশ বড় এবং সুন্দর কারুকাজ করা। এতো সুন্দর একটি অস্ত্র হাতে পেয়ে দৈত্য কিছুক্ষণ সেটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। আসলে দৈত্যটি ছিল অস্ত্র চালনায় পারদর্শী। তাই সে হাতের কাছে এতো সুন্দর ও ভালো একটি অস্ত্র পেয়ে সেটা দিয়ে আগে কিছুক্ষণ কসরত করার লোভ সামলাতে পারলো না। তাই সে ভোজালিটা দিয়ে আপনমনে কিছুক্ষণ কসরত করতে লাগলো এবং একপর্যায়ে মনে হতে লাগলো যেন সে ঘরের অন্ধকারে শুয়ে থাকা পিটারের কথা ভুলেই গেছে।

ওদিকে ভয়ে আতঙ্কে অস্থির হয়ে পিটার শুয়ে শুয়ে দৈত্যের কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলো। সে বুঝতে পারছিল যে আজই তার জীবনের শেষদিন। সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নাম জপ করা শুরু করলো। এমন সময় সে দেখতে পেল যে ধারালো অস্ত্রটা নিয়ে খেলতে খেলতে দৈত্য ভোজালিটা তার বুকের একদম কাছাকাছি নিয়ে এসে স্থির করে ধরেছে। এই দৃশ্য দেখে তার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে তার বিখ্যাত বাজখাঁই গলায় তাঁর গলার সবটুকু শক্তি দিয়ে তীক্ষ্ণ চিৎকার ছাড়ল আর ওদিকে ভোজালিটা ধরা ছিল দৈত্যের বুকের একদম কাছাকাছি, সুতরাং এহেন জোরগলায় বাজখাঁই চিৎকার শোনার পর দৈত্য ভীষণভাবে চমকে উঠলো। ফলে ধারালো ভোজালিটা তার হাত থেকে নড়ে গিয়ে একদম তার বুকের ভিতর আমূল ঢুকে গেল। দৈত্য ঠিক সেই অবস্থাতেই মারা গেলো।

তার বিশাল মরদেহটা ভাঙা সদর দরজা দিয়ে কাটা গাছের মতো ধড়াম করে গিয়ে পড়ল পিটারের বাড়ির সামনের উঠোনে।

পরদিন গ্রামের লোকজন যখন দেখল যে পিটারের বাড়ির সামনে এক ভয়াল দর্শন দৈত্যের মৃতদেহ পরে আছে, তখন তারা পিটারকে কাঁধে তুলে নিল এবং তারা পিটারকে বীর উপাধি দিলো।

এভাবে পিটার তার নিজের প্রকৃতি প্রদত্ত বাজখাঁই গলায় নিজের জীবন রক্ষা করল এবং একজন বীর হিসেবে স্বীকৃতি পেলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।