ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

যেখানেই থাকো ভালো থেকো

সানজিদা সামরিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
যেখানেই থাকো ভালো থেকো

বিকেলে সবে মাত্র বাড়ি ফিরেছি। মানা বললো- টুনটুনি, তোমার জন্য দারুণ খবর আছে।

দুপুরবেলা ছাদে খুব সুন্দর দুটো বিড়ালছানা দেখে এসেছে বুয়া।

আমার চোখ জ্বলন্ত লাইটারের মতো ঝপাৎ করে উঠলো- সত্যি ! এখনও আছে?

মানা বললো- চলো দেখে আসি গিয়ে।

ওহ্ মানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। মানা আমার বড় বোন। ওর নাম মনি। আমি ওকে মানা বলে ডাকি।

ছাদে গেলাম। তখন সন্ধ্যা নামি নামি করছে। আবছা আলোতে দেখলাম ছাদে রাখা জিনিপত্রের ভেতর জড়াজড়ি করে দুটো বিড়ালছানা বসে আছে।

আমি আদরের বুলি আওড়াতে আওড়াতে ওদেরর কাছে গিয়ে ঝুঁকে বসলাম।

আমাকে দেখে বাদামি-কালো ছানাটি হালকা বাদামি ছানার পেছনে লুকোলো। উফ! বিড়াল দু’টি এত্তো মিষ্টি কী বলবো! ছুঁয়ে আদর করতে ইচ্ছে করছিলো। আবার একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। সাহস করে হালকা বাদামি ছানাটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।

মানা বললো- টুনি, তোমার ভয় লাগে না? আমার ভয় লাগে আদর করতে।

ওকেও ধরতে পারি এ আশঙ্কায় বাদামি-কালো ছানাটি জিনিসপত্রের ভেতরে ঢোকার প্রস্তুতি নিলো। ওদের বয়স খুব কম। হয়তো গতকাল বা তার আগের দিনই ওদের জন্ম হয়েছে। খুব আস্তে আস্তে হাঁটছিলো।
 ‍
আমাদের প্রতিবেশী এক সাদা-কালো বিড়াল আছে। সে প্রায়ই সিঁড়িঘরের জানালা দিয়ে বাসায় আসে। হয়তো তারই ছানা হবে এরা দু’জন।  

মানা আগেই নিচে চলে গিয়েছিলো। আমার মনে হলো ছানা দু’টির হয়তো ক্ষুধা পেয়েছে। নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বাটিতে দুধ নিলাম। নাহ্, এতো ঠাণ্ডা দুধ খেতে পারবে না ওরা। তাই ওভেনে হালকা গরম করে ছাদে এলাম। ওদের সামনে দুধের বাটি রাখার পর হালকা-বাদামি ছানাটি এগিয়ে এলো। কিন্তু বাদামি-কালো ছানাটি পাত্তাই দিলো না। সুবিধার জন্য আমি বাটিটা একটু উঁচু করে ওর মুখের সামনে ধরলাম। হালকা-বাদামি বিড়ালটি বেশ আগ্রহের সঙ্গে খাচ্ছিলো। আমি অন্য বিড়ালটিকেও কাছে নিয়ে এলাম। এবার তারা দু’জনেই খাচ্ছে। খাওয়ানো হলো, এবার ওদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। জুতোর আলমারি থেকে বড়সড় একটি বাক্স এনে তাতে কাপড় বিছিয়ে ছানা দুটিকে বাক্সে তুলে নিলাম। ওরা ভয় পাচ্ছিলো। গলা উঁচু করে জিজ্ঞাসু চোখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলো। হয়তো ভাবছিলো ওদের আমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছি!

অ‍ামি অভয় দিলাম। বললাম- ভয় পেয়ো না সোনা।

আমার ঘরে নিয়ে গেলাম ওদের। আমাদের বাড়ি রাস্তার পাশে হওয়ায় গাড়ির খুব শব্দ আসে। গাড়ির শব্দে ওরা ভয় পাচ্ছিলো। তাই জানালা বন্ধ করে দিলাম। এরইমধ্যে ওরা বাক্স থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারছিলো না। বাদামি-কালো ছানাটি প্রথম থেকেই আমাকে পছন্দ করেনি। আর এখন বুঝি হালকা বাদামি ছানাটিও আমাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে। মিউ মিউ মিউ শুনে আম্মু পাশের ঘর থেকে এলো।
 
-একি করেছো টুনি? এতো ছোট বিড়ালছানা ঘরে নিয়ে এসেছো? ওরা তো অনেক ছোটো, মা ছাড়া বাঁচতে পারবে না।
- পারবে আম্মু। আমি বড় করবো।
- না বাবু, ওরা অনেক ছোটো। ওদের মা খুঁজবে ওদের। ছানারাও কষ্ট পাবে। যেখানে ছিলো সেখানেই রেখে এসো।
- আমার ওদের অনেক পছন্দ হয়েছে আম্মু।
- ঠিক আছে। ওরা আরেকটু বড় হোক তারপর নিয়ে এসো।
-যদি ওরা চলে যায়?
-যাবে না। এটা ওদের জন্মস্থান। ওরা এখানেই থাকবে।
আমি ফের ওদের ছাদে রেখে এলাম। পরদিন সকালে ছাদে গেলাম ওদের দেখতে। ওদের ব্রেকফাস্টের জন্য বাটি ভরে দুধ নিয়ে গেলাম। এবার আমাকে দেখে দুটো ছানাই জিনিপত্রের ভেতরে ঢুকতে শুরু করলো। আমি এত ডাকলাম তবুও এলো না।

শেষমেষ এতো ভেতরে ঢুকলো যে সেখানে আমার হাত পৌঁছাবে না। কী আর করা। দুধের বাটি সেখানে রেখেই চলে এল‍াম। আমি চলে এলে হয়তো ওরা নিজেরাই খেয়ে নেবে।

কিন্তু বিকেলবেলা ছাদে গিয়ে দেখি দুধ সেভাবেই পড়ে আছে। আর বিড়ালছানা দ‍ুটি? ওরা নেই। নেই মানে কোথাও নেই! অনেক খোঁজাখুঁজি করে চলে এলাম।

আম্মু বললো- ভেবো না, ওদের মা হয়তো নিয়ে গেছে। তবে ওরা আবার আসবে।

ভাইয়াকে জানাতে ভাইয়া বললো- জন্মস্থান ছেড়ে তো এভাবে ওরা যায় না। হয়তো কোনো কারণে অনিরাপদবোধ করেছে ওরা।
 
পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙতেই ছাদে গেলাম। তন্নতন্ন করে খুঁজলাম। সত্যিই ওরা নেই। হয়তো আমি ওদের ঘরে নিয়ে এসেছি বলে ছানারা ওদের মা’র কাছে নালিশ করেছে। তাই হয়তো ওদের মা ওদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

ওরা তো বোঝেনি আমি ওদের আদর করেছি। বুঝবে কী করে? ওরা যে অনেক ছোটো।

ছানা দুটো যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।