ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারা সংবিধান পরিপন্থী নয়: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারা সংবিধান পরিপন্থী নয়: হাইকোর্ট

ঢাকা: অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ২টি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাগুলো হলো, ২০০১ সালের আইনের ৯, ১৩ এবং ১৪।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি সহিদুল করিম এবং বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকি এবং অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুক। ভূমি সচিবের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ এবং সঞ্জয় মন্ডল।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

খুলনার শ্যামল কুমার সিংহ রায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর ধারা ১৩ এবং ১৪ চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে রিট দায়ের করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের মো. মশিউর রহমান বেগও একই সালে রিট আবেদন করেন।

রিটে ধারা ৯, ১৩ এবং ১৪ চ্যালেঞ্জ করেন। তারা উভয়ই তাদের দাবি করা সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর তফসিল (ক) ভুক্ত হওয়া অবৈধ বলে তা বাতিলের আবেদন করেন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে মামলা ২টিতে রুল জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে রুলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা করলেন আদালত।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত রায়ে বলেছেন, আইনের ধারাগুলো সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী নয়। চলমান অন্য মামলা অ্যাবেইট (বাদ দেওয়া) হলেও অর্পিত ট্রাইব্যুনালে বিচারের ফোরাম রয়েছে সুতরাং বাদীর অধিকার ক্ষুন্ন হবে না। ১৪ ধারা অনুসারে অর্পিত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ডিসিদের মাধ্যমে না হলে জনগণের সম্পত্তি বেহাত হবে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে। তাই এ ব্যবস্থা যথাযথ হয়েছে।

শুনানিতে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকি বলেন, সম্পত্তির অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং তা সংবিধান কর্তৃক নিশ্চয়তাকৃত। সুতরাং রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা কোনো কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করতে পারবে না। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট সব সময়ই মৌলিক অধিকারের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৯, ১৩ এবং ১৪ ধারা অনুযায়ী আবেদনকারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সুতরাং আইনের উক্ত ৩টি ধারা বাতিলযোগ্য।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রিট আবেদনকারীদের বর্তমান মামলা ২টি করার কোনো আইনগত কারণ নেই। কারণ বর্ণিত সম্পত্তি ২টি অর্পিত সম্পত্তি। তারা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর অধীন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তাদের প্রতিকার পেতে পারেন। ইতোমধ্যে তারা দজনেই ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। সেখানে আইনের ২৫ ধারা অনুসারে উক্ত ভূমি সম্পর্কিত যেকোন প্রতিকার পেতে পারেন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ তাদের জন্য ট্রাইবুনালের মাধ্যমে এক বিশেষ প্রতিকারের ব্যবস্থা করেছে। ফলে আইনের ধারা ১৩ অনুসারে দেওয়ানি মামলা অ্যাবেইটমেন্ট হলে তাদের কোনো ক্ষতির কারণ নেই।

তিনি আরও বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১-এর ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি ইজারা প্রদানে জেলা প্রশাসককে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, না হলে ওই সম্পত্তি নষ্ট, ধ্বংস এবং বেহাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং সরকারের রাজস্ব হানির সম্ভাবনা রয়েছে। ওই আইনের অধীন প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তারা কৌশলে আইন চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা ২টি দায়ের করেন।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, বর্ণিত সম্পত্তি ২টি অর্পিত সম্পত্তি। সুতরাং ‘ক’ তফসিলভুক্ত হওয়া আইনত হয়েছে। অর্পিত সম্প্রত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ অনুযায়ী তাদের প্রতিকার ট্রাইবুনাল দিতে পারে, কিন্তু তারা সম্পত্তির অধিকার বলবতকরণের জন্য কৌশলে জুডিশিয়াল রিভিউর অধীন আইন চ্যালেঞ্জ করছেন। সুতরাং মামলা ২টি খারিজযোগ্য। ধারা ১৩ অনুসারে দেওয়ানি মামলা অ্যাবেটমেন্ট হলে তাদের কোনো ক্ষতির কারণ নেই। কারণ সব প্রতিকার ট্রাইব্যুনালই দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।