রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুল ইসলাম রিপন হত্যা মামলায় জামাল পত্তনদার নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
রোববার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার সময় রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ মোছা. জাকিয়া পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত জামাল গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়ার (ফেলু মোল্যার পাড়া) হোসেন পত্তনদারের ছেলে। এ মামলায় ১২ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামাল পত্তনদার অনুপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সাবেক সভাপতি মোহন মণ্ডলের ছেলে ও ঢাকা সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইফুল ইসলাম রিপন ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাড়ি আসেন। রাতের খাবার শেষে তিনি তার বন্ধু ফরিদ শেখের সঙ্গে রাত সোয়া ৮টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে যান। রাত পৌনে ৩টার দিকে সাইফুল ইসলাম রিপনকে প্রলোভন দিয়ে দৌলতদিয়া পতিতা পল্লিতে নিয়ে কল্পনা বাড়ীওয়ালীর ২য় গেটের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বুকে, মাথায় ও থুতনিতে গুলি করে ঘটনাস্থলে হত্যা করে।
তার সঙ্গে থাকা তার বন্ধু ফরিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে মুখের মধ্যে ও পায়ে গুলি করে। এতে তার সাত/আটটি দাঁত ও মাড়ি উড়ে যায়। ফরিদকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম রিপনের মামা মো. খলিল বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আট/দশজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফুল হাসান আশা বলেন, এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া (ফেলু মোল্যার পাড়া) হোসেন পত্তনদারের ছেলে জামাল পত্তনদারকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া (খানকাহ শরীফ মসজিদ পাড়া) মৃত ওসমান সরদারের ছেলে মো. তমশের সরদার, উত্তর দৌলতদিয়া (মসজিদ পাড়া) আবু দাউদ বোপারী ওরফে দাদনের ছেলে মো. আশরাফ হোসেন, শাহ ব্যাপারী পাড়া গ্রামের মৃত সিদ্দিক শেখের ছেলে মো. ইয়াছিন শেখ, উত্তর দৌলতদিয়া (শামসু মাস্টার পাড়া) হালিমের ছেলে শহিদ শেখ ওরফে সোহেল, উম্বারকাজী পাড়া (উত্তর দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের) আইজাল প্রামাণিক ওরফে আবজাল প্রামাণিক ওরফে আজিজুল প্রামাণিকের ছেলে আমজাদ প্রামাণিক, উত্তর দৌলতদিয়া (হোসেন মণ্ডল পাড়া) ইসলাম প্রামানিণির ছেলে সুজন ওরফে জীবন প্রামাণিক, পূর্ব উজানচর (সাহের মন্ডল পাড়া) আদেল উদ্দিন ওরফে আদুর ছেলে মো. শমসের আলী শেখ, দৌলতদিয়া হোসেন মণ্ডল পাড়ার মোহন মন্ডণ্ডর ছেলে ইউসুফ, কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার গোপ গ্রামের মো. আব্দুস সাত্তারের ছেলে হারুন-অর রশিদ হারুন, শমসেরপুর গ্রামের রোকন উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে রাকিব উদ্দিন বিশ্বাস, পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার ছাতুক বরাট গ্রামের মৃত আজিজ প্রামাণিকের ছেলে বর্তমানে দৌলতদিয়া পতিতালয়ের লাল মিয়া কমান্ডারের বাড়ির রাজা প্রামাণিক, ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানার চরশালীপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আসাদকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ে আসামিপক্ষ সন্তুষ্ট। তারা ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সাইফুল ইসলাম রিপনের বাবা মো. মোহন মণ্ডল বলেন, এ রায় সঠিক হয়নি। আমি ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছি। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবো।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৩
আরএ