ঢাকা: ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ডেপুটি ডাইরেক্টর বখতিয়ার আহমেদ খান। সেই চাকরিচ্যুতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর)।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে এই সাবেক কর্মকর্তার পক্ষে দেওয়া রায় বৃহস্পতিবার বহাল রেখেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। খারিজ করে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন।
আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বখতিয়ার আহমদ খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আকতার ইমাম ও ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
১৯৮২ সালে এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পান বখতিয়ার আহমেদ খান। দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক হন তিনি। তবে ১৯৯০ সালের শেষের দিকে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কী অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল তা তাকে জানানো হয়নি।
চাকরিচ্যুতির ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৩ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বখতিয়ার আহমেদ। ২০০৫ সালে দেওয়া রায়ে তার চাকরিচ্যুতি বা বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করার পাশাপাশি সমুদয় সুবিধাসহ বকেয়া বেতন-ভাতা দিয়ে তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই রাষ্ট্রপক্ষ প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে। ২০০৯ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। বিলম্বে আপিলের কারণে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ আদালত সে আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। পরে আপিল বিভাগের খারিজ আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে সরকার, যা বৃহস্পতিবার খারিজ করেন সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগের আদেশের পর বখতিয়ার আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছরের আইনি লড়াইয়ে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার ওপর অগাধ বিশ্বাস ছিল। সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সবসময়ই অবিচল আস্থা ছিল। আর আমার মামলা নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম, এ মামলায় আমি জিতবো। আজকে আমার পক্ষে আদেশ হয়েছে। আমি এর জন্য খুবই কৃতজ্ঞ। আদেশ পক্ষে হলেও আমি আর চাকরি ফেরত পাব না। কারণ ২০১৬ সালে সরকারি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করেছি। কিন্তু আমি আশা করছি সমুদয় সুবিধাসহ বকেয়া বেতন-ভাতা আমি সরকারের কাছ থেকে পাবো।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০ বছর যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, আর্থিক মূল্যে সে দুর্ভোগের ক্ষতিপূরণ হয় না। তবে আমার একটা সন্তুষ্টি যে রায়-আদেশের মাধ্যমে আমার সামাজিক মর্যাদা আমি পুনরুদ্ধার করেছি। আমি এখন বুক উঁচু করে, মাথা উঁচু করে চলতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
ইএস/এইচএ/