ঢাকা: শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। চলতি (জানুয়ারি) মাসেই এই রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের পক্ষে আপিল করার কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা ১ জানুয়ারি ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ রায় দেন। ৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারকের স্বাক্ষরের পর ১১ জানুয়ারি তা প্রকাশিত হয়।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২১৭ ধারার বিধান মোতাবেক শ্রম আদালতের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে হবে। কিন্তু রায় প্রদানকালে যেহেতু ইউনূসকে ৩০ দিনের জন্য আপিলের সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল, তাই এ সময়ের মধ্যেই তাকে আপিল করতে হবে। সেই অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই এই আপিলের সময়সীমা শেষ হবে।
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি (প্রত্যায়িত অনুলিপি) হাতে পেয়েছি। এ মাসেই আমরা আপিল করব।
১ জানুয়ারি ইউনূসসহ চারজনকে শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করে। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন।
এই সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে যেসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তা বিধি সংশোধন করে সেসব সুবিধা দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ সময় ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রায় শুনতে বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীরা আদালতে উপস্থিত হন।
এর আগে ২৪ ডিসেম্বর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রাত সোয়া ৮টার দিকে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত।
২২ আগস্ট এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখেন তারা। এরপর থেকে মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। সেই থেকে ১০ম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করা হয়।
মামলার অন্য তিন বিবাদী হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
৮ মে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর ৬ জুন আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ম্রম বিধিমালা ১০৭ বিধি ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
কেআই/এএটি