ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

১৬৬ বছর পর আপন ঠিকানা পেল ৫ হাজার মামলার নথি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
১৬৬ বছর পর আপন ঠিকানা পেল ৫ হাজার মামলার নথি!

কুষ্টিয়া: মেহেরপুর জেলার গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের চতুর্থ জেনারেশনের উত্তরাধিকার রতন কৃষ্ণ মুখার্জী ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রেকর্ডরুম থেকে জমিজমার মামলা সংক্রান্ত নথি তুলতে এসেছিলেন।

আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের এ বিড়ম্বনার বিষয়টি বর্তমান কুষ্টিয়া সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিন ও অন্যান্য বিচারকের নজরে আসে।

কীভাবে এ বিড়ম্বনার স্থায়ী সমাধান করা যায়, সেই উদ্যোগ নেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ১৬৬ বছর ধরে কুষ্টিয়া আদালতের রেকর্ডরুমে পড়ে থাকা পাঁচ হাজার ৪৯টি মামলার নথি মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গোপাল কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ১৮৫৮ সালে প্রতিবেশী প্রাণ চাঁদ বন্দোপাধ্যায়ের নামে মেহেরপুরের মুনসেফি আদালতে মামলা করেছিলেন। যে মামলার নম্বর ছিল দেওয়ানি -২২৪/১৮৫৮। মামলাটিতে উভয়পক্ষের সাক্ষ্য শুনানি শেষে আদালত ২৬/০৩/১৮৫৮ খ্রি: রায় দেন। সেই থেকে ওই মামলার রেকর্ড/নথি কুষ্টিয়ার রেকর্ডরুমেই পড়ে ছিল। দীর্ঘ ১৬৬ বছর ধরে এমন আরও অনেক নথিই পড়ে ছিল এ রেকর্ড রুমে। কুষ্টিয়ার বর্তমান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিনের উদ্যোগে এসব নথিপত্র নিজ ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এতে মোট পাঁচ হাজার ৪৯টি মামলার নথি পেল নিজ ঠিকানা।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউনুস আলী বলেন, জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিন স্যার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আদালতে নানা রকম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম রেকর্ডরুম সংস্কার।

এক সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে সংযুক্ত ছিল মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা। ১৯৮৪ সালে তিনটি পৃথক জেলায় রূপান্তর হলেও চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের মামলাগুলোর নথি কুষ্টিয়ার রেকর্ডরুমেই এতো বছর পড়ে ছিল। এসব মামলার সঙ্গে দাখিল করা দলিলসহ অন্যান্য কাগজ নিতে হলে এতোদিন বাদী-বিবাদী পক্ষের লোকেদের কুষ্টিয়ায় আসতে হতো। এতে ভোগান্তি পোহাতে হতো তাদের। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিন রেকর্ডরুমের ভারপ্রাপ্ত জজ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা চেয়ে চিঠি পাঠান। পরে হাইকোর্ট বিভাগ নথি সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়ায় নথিগুলো পাঠানো হলো।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়া থেকে ট্রাক বোঝাই করে পাঁচ হাজার ৪৯টি মামলার নথি পাঠানো হয় মেহেরপুরে। এসময় দুই জেলা আদালতের রেকর্ড কিপার নথি বুঝে নেন ও বুঝিয়ে দেন।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রেকর্ড কিপার মির্জা শাহ আতিকুর রহমান বেগ জানান, দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আজ (বুধবার) মেহেরপুরের নথি মেহেরপুর জেলায় পাঠাতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত।

কুষ্টিয়ার জিপি আ স ম আখতারুজ্জামান মাসুম জানান, বিচারপ্রার্থী জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এখন থেকে মেহেরপুর জেলার কাউকে মামলার নথি তুলতে কুষ্টিয়ায় আসতে হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।