ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সোহেল হত্যা মামলায় সাক্ষীরা সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন: আদালত 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৪
সোহেল হত্যা মামলায় সাক্ষীরা সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন: আদালত 

ঢাকা: নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় অধিকাংশ সাক্ষী মারা গেছেন। যারাও সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট, তারা সত্য গোপন করেছেন।

 

সোহেল হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পর দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত এ মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার (০৯ মে) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী রায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।  

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। এছাড়া তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনই পলাতক।  

এছাড়া খালাস পেয়েছেন সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও ফারুক আব্বাসী। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে।  

আসামিদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।  

জামিনে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী হাজিরা দেন। তবে রায়ের সময়ে বোতল চৌধুরী ছাড়া অন্য দুজন অনুপস্থিত ছিলেন।  

বিচারক রায়ে বলেন, এ মামলার সিডি (কেইস ডকেট) পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় সিডি গায়েব করা হয়েছে। আসামি আদনান সিদ্দিকী ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েন। তিনি যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা অনেকটা গা বাঁচিয়ে দেওয়ার মতো। সোহেল চৌধুরী কোনো অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। অথচ তিনি খুন হলেন আর ট্রাম্পস ক্লাবের ম্যানেজার বলেছেন জেনেছি সোহেল চৌধুরী নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় আহত অপর একজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

রায়ে আরও বলা হয়, যারা পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের অনেকেই মারা গেছেন। তাই তাদেরকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জবানবন্দি গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেটও আদালতে সাক্ষ্য দেননি৷ যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারাও পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন ও সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন। এতো বছর ধরে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রতিটি মৃতের আত্মা বিচার চায়।  

সাক্ষ্য পর্যালোচনায় আরও বলা হয়,  আদনান সিদ্দিকী কয়েকজনের নাম বলেছেন নিজের গা বাঁচিয়ে। যে নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে সে অন্যে নামেও অসত্য বলতে পারেন। যাদের নাম বলছে, তাদের কাছ থেকে কোনো রিকভারি হয় নাই। তারা যে সেখানে ছিলেন সেটা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও যাদের নাম বলছেন আদনান সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজনও যদি সেখানে না থাকেন বা একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন, তাহলে তার ভাষ্য অনুযায়ী আসামিদের গুরুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।

তাই আসামি আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তবে বান্টির বক্তব্যে ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরীর নাম এলেও ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি বিধায় তাদের খালাস দেওয়া হল। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি ফারুক আব্বাসী ও তারিক সাঈদ মামুন রায়ের দিন না এলেও তাদের বিরুদ্ধে ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরও খালাস দেওয়া হলো।  

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।  

চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলাটির প্রায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়ে গ্রহণ করেন আদালত।  

ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, ‘মামলাটির বেশিরভাগ সাক্ষী মারা গেছেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও আদালতে এসেছে। এজন্য আদালতে যারা এসেছেন তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমেই প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়। ’

বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

ওই বছরই এক আসামি মামলা বাতিলে হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে হাইকোর্টের আদেশে মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল। ২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। তারও সাত বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত এলে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৪
কেআই/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।