ঢাকা: হেলিকপ্টার থেকে যারা গুলি করেছেন শুধু তারাই দায়ী নন, যারা নির্দেশ দিয়েছেন তারাও দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বাড়ির ছাদ ও বারান্দা-আঙিনা থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিশুদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানিতে বুধবার (১৩ আগস্ট) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
আদালতে রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব।
আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে বলেন, কোনো পাবলিক মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে স্বাধীনতার পর কেউ দেখেনি। এই হেলিকপ্টার থেকে ঘরে গুলি ছুড়েছে।
আদালত বলেন, তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার কারণে মারা গেছে ? তখন আইনজীবী বলেন, পত্র–পত্রিকার খবরে এসেছে।
এক পর্যায়ে আদালত বলেছেন, যারা সিস্টেম নষ্ট করে এসেছে, তাদেরও জবাবদিহিতা আছে। শুধু হেলিকপ্টারের ওপর থেকে গুলি কে করেছে—তেমনটি নয়। যারা গুলি করেছেন শুধু তারাই দায়ী নন, যারা অর্ডার (আদেশ) দিয়েছেন, তারা দায় এড়াতে পারেন না।
শুনানি শেষে আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
এ বিষয়ে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার জনস্বার্থে রিটটি করেন।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়য়।
গুলির ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।
রিটে যুক্ত করা দৈনিক সমকালে ২৯ জুলাই প্রকাশিত ‘ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরলো ওরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আহাদ, রিয়া, সামির, হোসাইন, মোবারক, তাহমিদ, ইফাত ও নাঈমা নামের ফুলের মতো শিশুগুলো সবে ফুটছিল। তবে আর বিকশিত হতে পারেনি। বুলেটের আঘাতে ছোট্ট জীবনগুলো ঝরে গেছে কুঁড়িতেই। বাবার কোলের মতো নিরাপদ আশ্রয়েও তাদের আঘাত করেছে ঘাতক বুলেট। আবার কারফিউ মেনে ঘরের কোণে থেকেও কারও জীবনসৌরভ মুছে গেছে বারুদের গন্ধে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কয়েক দিনের সংঘর্ষে অন্তত ৯ শিশু গুলিতে নিহত হয়েছে। তাদের বয়স ৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই তারা গুলিবিদ্ধ হয়। নিহত চারজন মারা গেছে নিজ বাড়িতেই। চারজন গুলিবিদ্ধ হয় সড়কে। সব ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে এই শিশুদের। এখনো চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ এমন কিছু শিশু।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা,আগস্ট ১৪, ২০২৪
ইএস/এইচএ