ঢাকা: পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দক্ষ তদন্ত সংস্থা উল্লেখ করে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, পিবিআইয়ের মাধ্যমে এ হত্যা মামলার তদন্ত চাইবেন তিনি।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন আইনজীবী শিশির মনির।
এর আগে মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলী রোমান আইনজীবী শিশির মনিরকে বাদীপক্ষে নিযুক্ত করার কথা জানান।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ক্রিমিনাল মামলার বিচারের দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রের। কিন্তু আইনে আছে কোনো ভুক্তভোগী কিংবা অভিযোগকারী চাইলেও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী স্বাধীন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। এভাবে সাগর-রুনি মামলার যিনি অভিযোগকারী ছিলেন তিনি আমাকে নিযুক্ত করেছেন। আমরা নিম্ন আদালতে দরখাস্ত দায়ের করব। তদন্ত যারা করছে তাদের সঙ্গে বসব। যেসব ক্লু আছে সেগুলো ধরে পরবর্তী তদন্ত করতে হবে।
তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন র্যাব করছেন। আমাদের জানামতে বাংলাদেশে সবচাইতে ইফিশিয়েন্ট তদন্ত সংস্থা হচ্ছে পিবিআই। আমরা পরামর্শ করেছি, আমরা চাইবো সবচাইতে দক্ষ টিম পিবিআই কর্তৃক তদন্ত হোক।
রুনির ভাই নওশের রোমান জানান, বহুদিন ধরে মামলাটার অগ্রগতি দেখছি না। আমরা জানিও না কি হচ্ছে। র্যাব কিন্তু নতুন সরকার আসার পরেও সময় নিয়ে যাচ্ছে। সামনের ১৫ (অক্টোবর) তারিখে টোটাল ১১৪ বারের মতো সময় চাইব। এটার আইনি কার্যক্রম দেখার জন্য, এটার ভেতরে কি হচ্ছে মোহাম্মদ শিশির মনির ভাইকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এত বছর তো আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের রেসপন্স আমরা পাচ্ছিলাম যে, আসলে বিচার চাওয়াকেও লজ্জাজনক ব্যাপার মনে করছিলাম। এখন নতুন নির্দলীয় সরকার এসেছে। আগের যে সরকার তারা যেভাবে মামলাটা ধামাচাপা দিয়েছিলো ,ওই সরকার যেহেতু নেই আমরা মনে করছি কিছু হতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হয় কিছু ততক্ষণ পর্যন্ত আনন্দিত বা আশা করার কিছু নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতদিন যোগাযোগ করতো না। গত ৫ আগস্টের তদন্ত কর্মকর্তা কয়েকদিন এসেছেন বাসায়, এতটুকুই। অগ্রগতি হওয়ার মতো আমাদের কিছু জানাইনি।
এ মামলার তদন্ত নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছিলেন, ফৌজদারি মামলার তদন্ত কাজ যেন দীর্ঘ দিন ঝুলে না থাকে, পুলিশকে সে ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ১১১ বার সময় নেওয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্ত কাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা সময়ের আবর্তে মামলার অনেক সাক্ষী ও সাক্ষ্য হারিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।
দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে প্রায় ১২ বছরে ১১১ বার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
আগের নিউজ লিংক>>সাগর-রুনি হত্যা মামলায় শিশির মনিরকে আইনজীবী নিয়োগ
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
ইএস/এসএএইচ