ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নিজেই শুনানি করলেন ২১ আগস্ট মামলার আসামি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
নিজেই শুনানি করলেন ২১ আগস্ট মামলার আসামি

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় কোনো আইনজীবী না রেখে নিজেই নিজের পক্ষে যুক্তিতর্ক উত্থাপন করলেন আসামি জান্দাল ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মুফতি মইন।

শুনানির শুরুতেই এ মামলার অপর আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাদের স্বীকারোক্তিতে একই ব্যক্তিকে কখনো জান্দাল, কখনো আবু জান্দাল আবার কখনো মুফতি মইনের বলা হয়েছে।

সেখানে তার পিতার নাম কিংবা ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। আমার নাম মইন উদ্দিন শেখ। আমি সেই জান্দাল, আবু জান্দাল কিংবা মুফতি মইন নই। শুধুমাত্র নামের মিলের কারণেই আমাকে এ মামলায় গ্রেফতার করে জড়ানো হয়েছে।

এ সম্পর্কে ট্রাইব্যুনালে আনিত তার দুই সাক্ষির জবানবন্দি তুলে ধরেন। সেখানে তাকে তারা মইন উদ্দিন শেখ নামেই চেনে। কখনো কোথাও তিনি জান্দাল, আবু জান্দাল কিংবা মুফতি মইন নামে পরিচিত ছিলেন না মর্মে উল্লেখ রয়েছে।

তার জবানবন্দি শেষ না হওয়ায় আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল বাকি যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। খোদাবক্স নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে খালাস দাবি করেন তার  আইনজীবী।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে দুপুর ১২টা থেকে বেলা সোয় ২টা পর্যন্ত যুক্তিতর্ক শুনানির হয়।

মামলার ৪৯ জন আসামির মধ্যে ৩৩ আসামির যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। ৩৩তম আসামি হিসেবে সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন।

এরপর দুপুর পৌনে ২টায় আসামি মুফতি মইন কোনো আইনজীবীর সাহায্য না নিয়ে নিজেই তার যুক্তিতর্ক আদালতের সামনে উত্থাপন শুরু করেন।

মামলাটি প্রমাণে ৫১১ সাক্ষির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২২৫ জন আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্যদিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

এ মামলায় মোট আসামি ছিল ৫২ জন। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলার অন্যতম আসামি সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এছাড়া মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুলের ১২ এপ্রিল রাতে ফাঁসি কার্যকর করা হওয়ায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।  

৪৯ আসামির মধ্যে ৮ জন জামিনে, ১৮ জন পলাতক ও ২৩ জন হাজতে রয়েছেন।

এ মামলার জামিনে থাকা আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে আটক আছেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এমআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।