ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অস্বচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের আশ্রয়স্থল লিগ্যাল এইড অফিস

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৮
অস্বচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের আশ্রয়স্থল লিগ্যাল এইড অফিস ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজেশ চৌধুরী

ঢাকা: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালতে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন অসহায় ও অস্বচ্ছল বিচারপ্রার্থী মানুষ। দিন দিন এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

‘উন্নয়ন আর আইনের শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ, লিগ্যাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২৮ এপ্রিল (শনিবার) পালিত হচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস।

সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা, আইনি জটিলতায় পতিত দেশের দরিদ্র জনগণকে সচেতন করা ও ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৩ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

এ উপলক্ষে শনিবার ঢাকা জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজেশ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- লিগ্যাল এইড ক্যাম্প, আইনগত পরামর্শ দেওয়া, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা।

রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠান একসঙ্গে পালন করবে আইনগত সহায়তা কমিটি ও ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি।

তিনি আরো জানান, অনুষ্ঠানে আইনগত সহায়তার সুফলভোগীরা তাদের বক্তব্য দেবেন। এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়াও লিগ্যাল এইড মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

রাজেশ জানান, শুধুমাত্র ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে ২০১৫ সালে ২ হাজার ২২ জনকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪ হাজার ২৭০ জনে। এক বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি।

২০১৫ সালে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে ১৫৫ জন, ২০১৬ সালে ৯৪৯ জন ও ২৯১৭ সালে ১৫২৪ জন আসামি বিভিন্ন মামলায় জামিন পেয়েছেন।

সিভিল ক্রিমিনাল সব ধরনের মামলায় এ সহায়তা দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

যাত্রা শুরু যেভাবে:
১৯৯৪ সালে ৮ নম্বর রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আইনগত সহায়তা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ রেজুলেশন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি আইনগত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়। এ রেজুলেশনের আওতায় ৪৮টি জেলায় আইনগত সহায়তা কার্যক্রম চালু করা হয় এবং এর অনুকুলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ পাস হয়।

সরকারি আইনি সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা
অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রিম কোর্টে আইনগত সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার উর্ধে নয়।

কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক দেড় লাখ টাকার উর্ধে আয় করিতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধা।

যে কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় এক লাখ টাকার উর্ধে নয়। যে কোনো শিশু। মানব পাচারের শিকার যে কোনো ব্যক্তি। শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু। নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে। যে কোন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠীও সম্প্রদায়ের লোক।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এরুপ যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি।

বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এরূপ ব্যক্তি। ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা। দৃর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু। আদর্শগ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তি। অসচ্ছল বিধবা স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ নারী। যে কোন প্রতিবন্ধী। আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে অসমর্থ ব্যক্তি। বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল। আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি। জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৮
এমআই/ইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।