ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাজারের পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার নির্দেশ হাইকোর্টের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
বাজারের পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার নির্দেশ হাইকোর্টের

ঢাকা: বিশেষজ্ঞ কমিটি করে বাজারে প্রাপ্ত পাস্তুরিত তরল দুধ পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
 

এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব ও বিএসটিআইটি কর্তৃপক্ষকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সোমবার (২১ মে) রুলসহ এ আদেশ দেন।


 
১৬ মে বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
 
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
 
বাজারের ৭৫ ভাগ পাস্তুরিত দুধ সরাসরি পানের অযোগ্য

শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ) ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।  
 
পরে তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি করে পাস্তুরিত তরল দুধ পরীক্ষার পর এক মাসের মধ্যে খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব ও বিএসটিআইটি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
 
এছাড়া আইসিডিডিআর,বি’র প্রকাশিত প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আদালত রুলও জারি করেছেন। নিরাপদ পাস্তুরিত দুধের নিশ্চয়তা দিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
 
চার সপ্তাহের মধ্যে খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিএসটিআই’র মহাপরিচালক, আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেছেন আদালত।
 
বাংলানিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দুগ্ধ খামারগুলো থেকে শুরু করে দোকান পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে দুধ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত। যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।  
 
এটি বিপজ্জনক হতে পারে যদি এই দুধ ‘কাঁচা’ (ফুটানো ছাড়া) অবস্থায় পান করা হয়। উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশে কাঁচা দুধ পানের প্রবণতা দেখা যায়। বাজারের এই কাঁচা দুধ সরাসরি পান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে আখ্যা দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআর,বি) গবেষকরা।
 
সম্প্রতি শিশুদের পুষ্টির প্রাথমিক উৎস বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে গবেষণা করে তারা এই অপ্রীতিকর ফল দেখতে পেয়েছেন।
 
দুগ্ধশিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দুধের অণুজীব বিজ্ঞানসম্মতভাবে মান যাচাই করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দুধ উৎপাদক, হিমাগার এবং স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে কাঁচা দুধের ৪৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করেছিলো আইসিডিডিআর,বি। এছাড়াও ঢাকা এবং বগুড়ার বিভিন্ন দোকান থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত দুধের ৯৫টি নমুনাও সংগ্রহ করে তারা।  
 
বিজ্ঞানীরা দেখেন যে প্রাথমিক দুধ উৎপাদনকারী পর্যায়ে ৭২ শতাংশ নমুনা কলিফর্ম (≥১০০ সিএফইউ/এমএল) এবং ৫৭ ভাগ নমুনা ফিক্যাল কোলিফর্ম (≥১০০ সিএফইউ/এমএল) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত।  
 
এছাড়া নমুনাগুলোর ১১ শতাংশই উচ্চমাত্রার ই. কোলাই (≥১০০ সিএফইউ/এমএল) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত। ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। দুধে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির ফলে বোঝা যায় যে, এই দুধ জীবাণু বা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা দূষিত। যা উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মলে থাকতে পারে বা দুধ দোহনের সময় দুধে মিশতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
 
উৎপাদনকারীদের থেকে দুধ সংগ্রহের স্থানে দেখা গেছে, নমুনাগুলো উচ্চমাত্রার কলিফর্ম  ব্যাকটেরিয়া (≥১০০ সিএফইউ/এমএল) দ্বারা দূষিত। এবং মল দ্বারা দূষিত হওয়ার হার ছিলো ৯১ ভাগ ও ৪০ ভাগ নমুনায় উচ্চমাত্রার ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া ছিল।  
 
আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, পরীক্ষিত পাস্তুরিত দুধের নমুনার প্রায় ৭৭ ভাগে মোট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা (অ্যারোবিক প্লেট কাউন্ট) উচ্চমাত্রাবিশিষ্ট। যা বিএসটিআই-এর (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) মানদণ্ডকে ছাড়িয়ে যায়।  
 
কেয়ার বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায়  ‘স্ট্রেংদেনিং দ্য ডেইরি ভ্যালু চেইন (এসডিভিসি)’ প্রকল্পের আওতায় বগুড়া, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রংপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ১৮টি উপজেলায় এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফল ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।