ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় হাইকোর্টের রুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় হাইকোর্টের রুল হাইকোর্ট

ঢাকা: নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে করা চারটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সচিব,  বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন ও অমিত দাশগুপ্ত।

পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, দুই আইনজীবীর রিটে শুধু ১৭ দফার বাস্তবায়নের ব্যর্থতা নিয়ে রুল জারি করেছেন। বাকি তিনটি রিট চার সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ড ওভার রেখেছেন। এছাড়া কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীনভাবে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় যেন ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ লাখ টাকা করে দেয় সে আদেশ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ওনার জানামতে একলাখ টাকা করে দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের এ মনোভাব (৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার) সরকারকে জানাবেন।  

নিমতলীর ট্রাজেডির ঘটনায় তদন্ত কমিটির করা ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১০ বছর চলে গেছে আমলারা সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারে না।   
 
শুনানিকালে ‘নিমতলী টু চকবাজার’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, চকবাজারের ঘটনায় ৬৯ জন নিহত হয়েছেন। নিমতলীর ঘটনায় শিক্ষা নিলে হয়তো চকবাজারের ঘটনা ঘটতো না। কিন্তু বিবাদীরা (সরকারের সংশ্লিষ্টরা) কোনো দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। তিনি বলেন, এই আবেদনে কারও ব্যক্তিস্বার্থ নেই। এখানে গোটা দেশের স্বার্থ জড়িত। অনেক নির্দোষ সাধারণ মানুষ মারা গেছে।
 
এসময় আদালত বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত কমিটি হয়েছিলো কিনা এবং ওই তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছিলো কিনা। জবাবে ব্যারিস্টার কাজল বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করে। সেই কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ করেছিলো। আদালত বলেন, ঘটনা ঘটার পর তদন্ত কমিটি হয়, সুপারিশ হয়, কিন্তু সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় দরকার। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে সমস্যার ৮০ শতাংশ সমাধান হয়ে যেত। অথচ আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম চকবাজারের ঘটনার পর গঠিত একাধিক কমিটির কার্যক্রম তুলে ধরেন। এসময় আদালত বলেন, এসব কমিটিতো হয়েছে দুর্ঘটনার পর। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ করেছিলো। এগুলোর বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ নেই। ...সুপারিশ বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
 
আদালত বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী অনেক আন্তরিক ছিলেন। দু'টি মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে করা সম্ভব না। এখন সাবেক শিল্পমন্ত্রীরা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। এতে সরকারের প্রতি জনগণের ধারণা কি হবে? ১০ বছর চলে গেছে আমলারা সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারে না। আমলারা কি করে? এসব বুরোক্রেটদের দিয়ে কি হবে?
 
আমাদের ওইসব লোকগুলোও দরকার আবার তাদের নিরাপত্তাও দরকার। ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠান দরকার বলে উল্লেখ করেন আদালত।
 
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আলাদা কেমিক্যাল জোন তৈরি, একটি দূরদর্শী (ওয়াইজ) পরামর্শ। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, সেখানের উন্নয়ন, অবকাঠামো তৈরি-এসবের জন্য অনেক সময় দরকার। আদালত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এতো সময় নেই যে তাকেই সববিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। পুরান ঢাকা নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।

চকবাজারে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬৯ জন। আহত হন আরো অনেক। এখানকার নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশন ঘিরে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় হাইকোর্টে ৫টি আবেদন করা হয়।

চুড়িহাট্টার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত/ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ, নিমতলীর ট্রাজেডির পর তদন্ত কমিটির করা ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ আজমী ও খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার, আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং বংশালের বাসিন্দা জাবেদ মিয়া কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা এবং ব্যবসার উদ্দেশে মজুদ করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণ নিয় রিট করেন।

এ চারটি রিট ছাড়াও একটি আবেদন করে কয়েকটি সংগঠন।  

২০১০ সালে রাজধানীর নিমতলী ট্র্যাজেডির তদন্ত কমিটির ১৭ দফা বাস্তবায়ন চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়। এজন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হতাহতের ঘটনায় পুরান ঢাকায় আর যেন রাসায়নিক ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া না হয় তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আবেদন করা হয়।

এ আবেদনের আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।