ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দই-দুধে ভেজাল: জড়িতদের চিহ্নিত করতে বলেছেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৬ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৯
দই-দুধে ভেজাল: জড়িতদের চিহ্নিত করতে বলেছেন হাইকোর্ট

ঢাকা: দুধ, দই এবং পশুখাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার বিষয়টি আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটির কর্মপরিধির মধ্যে যোগ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
 
 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (৮ মে) এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৫ মে দিন রেখেছেন আদালত।


 
গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে হাইকোর্ট দুধ, দই এবং গো খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সিসা, রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তা নিরুপণে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
 
বুধবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম আদালতে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
 
আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক।
 
পরে ফরিদুল ইসলাম বলেন, ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কর্মপরিধিও তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুধ, দই এবং পশু খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার বিষয়টি যোগ করতে বলেছেন। এছাড়া কমিটির ফাইনাল রিপোর্টে যেন জড়িতদের নাম থাকে সেটি বলেছেন আদালত।
 
আমিনউদ্দিন মানিক বলেন, কারা এর সঙ্গে জড়িত সেসব কোম্পানিসহ নাম জানতে চেয়েছেন আদালত এবং আগামী ১৫ মে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
 
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ ফেব্রুয়ারি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে একটি জরুরি মতবিনিময় সভা হয়। সভায় বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনাক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ১. চার সপ্তাহের (২৪ এপ্রিল থেকে আগামী ২২ মে) মধ্যে কাঁচা তরল ও পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ, গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফলাফল পর্যালোচনা; ২. পশু খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ এবং গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফলাফল পর্যালোচনা (২৩ মে থেকে ২২ জুনের মধ্যে); ৩. (২৩ জুন থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে) প্রাথমিক উৎপাদন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ, ফলাফলসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং কমিটি কর্তৃক যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন।
 
প্রতিবেদনে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি পরিচালিত ফলাফলের সারসংক্ষেপে থেকে বলা হয়েছে-
ক. কাঁচা তরল দুধে ৯৬টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে অনুজৈবিক বিশ্লেষণ রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৩টি নমুনাতে টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান এবং একটি নমুনায় সালমোনেলা পাওয়া গেছে। রাসায়নিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ৫টি নমুনাতে লেড, ৩টিতে আফলাটক্সিন, ১০টিতে টেট্রাসাইক্লিন, ১টিতে সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ৯টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডোসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া যায়।  
খ. প্যাকেটজাত তরল দুধের ৩১টি নমুনার (দেশি ২১টি এবং আমদানি ১০টির) মধ্যে ১৭টি দেশি দুধের নমুনাতে টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট, ১৪টিতে মোল্ডস এবং আমদানিকৃত ১টির নমুনাতে কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশি দুধের একটি নমুনায় আফলাটক্সিন, ৬টিতে টেট্রাসাইক্লিং এবং আমদানি দুধের তিনটিতে টেট্রাসাইক্লিং ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে।
গ. দইয়ের ৩৩টি নমুনার ১৭টিতে টিপিসি, ৬টিতে কলিফরম কাউন্ট, ১৭টিতে ইস্ট/মোল্ড এবং ১টিতে সিসা ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান।
ঘ. পশু খাদ্যের ৩০টির মধ্যে ১৬টিতে ক্রোমিয়াম, ৪টিতে আফলাটক্সিন, ২২টিতে টেট্রাসাইক্লং, ২৬টিতে এনরোফ্লক্সাসিন, ৩০টিতে সিফরোফ্লক্সাসিন এবং ২টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান।
 
গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘গাভির দুধ ও দইয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক, সিসা!’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাভির দুধে (প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া) সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে বিভিন্ন অণুজীবও। একইসঙ্গে প্যাকেটজাত গাভির দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত। বাদ পড়েনি দইও। দুগ্ধজাত এই পণ্যেও মিলেছে সিসা।
 
সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব ফলাফল ওঠে এসেছে। সংস্থাটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভির খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে এই জরিপের কাজ করেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ কয়েকটি আদেশ দেন। আদেশে দুধ, দই এবং গো-খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সিসা, রাসায়নিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তা নিরূপণে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশদেন। এই কমিটিকে প্রতি ৬ মাস পরপর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য মানুষ যেন সঠিক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুধ, দই এবং গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও দুদককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়:১৯৪৭ ঘণ্টা, মে ০৮,২০১৯
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।