বিএসটিআই’র পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ৫২টি পণ্য বাজার থেকে সরানোর নির্দেশে দেওয়া আদেশে রোববার এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
আদেশের পরে শিহাব উদ্দিন খান বলেন, আদালত মতামত দিয়েছেন- শুধু রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযান কাম্য নয়, সারা বছর চলা উচিত। খাদ্য নিরাপদকরণের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন শুধু কর্মকর্তা হিসেবে না কাজ করেন, তারা যেন দেশপ্রেমিক হিসেবে জনগণের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। একটি সমন্বিত উদ্যোগ (খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর) ছাড়া, আসলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আদালত প্রত্যাশা করেছেন, খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
‘প্রয়োজনে যেন ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়। যেমনটি করা হয়েছিলো মাদকের বিরুদ্ধে। জিরো টলারেন্স দেখাতে বলেছেন। কোর্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অথরিটির প্রায়োরিটি নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কিন্তু ওনারা (আদালত) অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারকে, যেন এই মুহূর্তে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি টপ প্রায়োরিটি দিয়ে এক নম্বরে প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনা করেন। এইটা দুইবার বলেছেন, যেন খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ’
যারা কাজকর্ম করে খায় শ্রমজীবী মানুষ তাদের জন্য ওয়াসার পাইপলাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি নিশ্চিতের জন্য বলেছেন- জানান শিহাব উদ্দিন খান।
মোখলেছুর রহমান বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ পালন করতে হবে। উৎপাদনটা বন্ধ করতে বলেছে। বাজারে যেগুলো আছে সেগুলো তুলে ডেস্ট্রয় করতে। যতদিন পর্যন্ত না বিএসটিআই আবার পরিমাপ করা বলছে না যে এটা নিরাপদ, ততদিন পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এক প্রশ্নে মোখলেছুর রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আইনে সব ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা তা পালন করছে না। এজন্য কোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ২ মে শিল্প মন্ত্রণালয়ে ‘পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন নিম্নমানের পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করেন।
ওই সময় বলা হয়, রমজান মাস উপলক্ষে খোলা বাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে করে বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩১৩টি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এসব পরীক্ষায় ৫২টি অকৃতকার্য হয়েছে।
এ ৫২ পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, পানি, লাচ্ছা সেমাই, নুডলস, সফট ড্রিংক পাউডার, হলুদের গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া, কারি পাউডার, ঘি, মরিচের গুঁড়া, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ময়দা, ফারমেন্টেড মিল্ক (দই), চানাচুর, বিস্কুট, সুজি, মধু, চিপসসহ আরো কয়েকটি পণ্য।
পরে এসব পণ্যের উৎপাদন বন্ধ, বাজার থেকে অপসারণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ।
বুধবার এ রিট শুনানিতে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন। সে অনুসারে রোববার বিএসটিআইর উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক সহদেব চন্দ্র সাহা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
** সেসব ভেজাল পণ্যের তালিকা
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
ইএস/এএ