নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় এমন মন্তব্য এসেছে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে।
গত ১০ এপ্রিল দেওয়া এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি রোববার (১২ মে) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রাম আদালতে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই লাভলি আক্তারের করা মামলায় তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারায় দেওয়া এক রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে করা মামলায় এ রায় দেয়া হয়।
২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের লাভলি আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার গচিহাটা গ্রামের শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। চাকরির সুবাদে তারা চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন। এর মধ্যে যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে লাভলি আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারায় মামলা করেন।
এ মামলায় বিচার শেষে শফিকুল ইসলামকে ২০১৪ সালে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। এ রায়ের সময় শফিকুল ইসলাম পলাতক ছিলেন।
পরে শফিকুল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং ওই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিনের আবেদন জানান। হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ তাকে জামিন দিলে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিরোধ মিটে যায়। এর মধ্যে তাদের সংসারে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। হাইকোর্ট ১০ এপ্রিলের রায়ে শফিকুলের দণ্ড ও সাজা বাতিল করেছেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, যৌতুকের দাবিসহ যে কোনো অজুহাতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় ও গর্হিত অপরাধ। এরপরেও এ অপরাধ সংঘঠনের পরে যদি স্বামী ও স্ত্রী নিজেদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দাম্পত্য জীবন অব্যাহত রাখার সংকল্প ব্যক্ত করেন বা রাখেন সেক্ষেত্রে আইনের বিধান যত কঠিনই হোক না কেন একটি সংসার রক্ষা করার চাইতে সেটি বড় হতে পারে না। একটি সংসার ভেঙে গেলে তার পারিবারিক ও সামাজিক নেতিবাচক দিক সুদূর প্রসারী। এতে শুধু সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ই ঘটে না তাদের সন্তান এমনকি নিকট আত্মীয়-স্বজনের উপরেও এর গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আইনের প্রয়োগ এবং এর ব্যাখ্যা যান্ত্রিক হতে পারে না। আইনের শাসনের মূল লক্ষ্যই হলো অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করা বলে মন্তব্য করেন আদালত।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ১১(গ) এর আওতায় সংঘটিত অপরাধ আপসযোগ্য না হলেও ওই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর কারাদাণ্ড, একইসঙ্গে জরিমানার বিধান রয়েছে।
অপরদিকে যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ৩ ও ৪ ধারায় অপরাধ সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছরের শাস্তির বিধান করা হলেও ওই আইনের অপরাধকে আপসযোগ্য করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩২৩,৩২৪ ও ৩২৫ ধারায় সাধারণ আঘাত,মারাত্মক জখম অস্ত্র ব্যবহারে আঘাত এবং গুরতর আঘাতের জন্য যথাক্রমে জরিমানাসহ সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর, তিন বছর এবং সাত বছরের বিধান রয়েছে। উপরোক্ত তিনটি ধারাই আপসযোগ্য।
এজন্য এসব ধারার অপরাধসমূহের প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পারিবারিক, সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি সুনিশ্চিতের পাশাপাশি মামলা জট নিরসনের স্বার্থে ১১(গ) ধারার অপরাধটি অনতিবিলম্বে আপসযোগ্য করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আইনের ১১ (গ) ধারার অপরাধ আপসযোগ্য করার লক্ষ্যে এ রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন এবং লেজিসলেটিভ এবং সংসদ বিষয়ক সচিবকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, হাইকোর্টের এ রায়ের আলোকে ১১ (গ) ধারার অপরাধ উভয়পক্ষ সম্মত হলে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
বাংলারেদশ সময়: ০৭৩৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
ইএস/এসএইচ