বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১৫ মে) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে উদ্দেশ্যে করে এমন সতর্কবার্তা দেন।
রাজধানীতে বায়ু দূষণ রোধে পানি ছিটানোর বিষয়ে জানতে দুই সিটির প্রধান নির্বাহীদের তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
শুনানির শুনতে পানি ছিটানোর বিষয়ে দুই সিটির আইনজীবী নুরুন্নাহার আক্তার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তখন আদালত বলেন, ‘কখন, কোথায় পানি ছিটানো হয়েছে তার ডিটেইল আছে? ছবি দেখে তো কিছু বোঝা যায় না। ’
আইনজীবী বলেন, ‘বলা আছে কে কখন কোথায় পানি ছিটিয়েছে। ’ আদালত বলেন, ‘কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত পনি ছিটানো হয়েছে?’
জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘খুব সকালে। ’ তখন আদালত বলেন, ‘এই যে সকালে লিখলেন, বিকেলে লিখলেন, এটা একটা গোঁজামিল দিলেন আরকি। গোঁজামিল বোঝেন তো?’
এ সময় আইজীবী বলেন, ‘আমাদের জিপিএস আছে। সেন্ট্রাল মনিটরিংটা করা হয় জিপিএসের মাধ্যমে। ’
আদালত বলেন, ‘কোন টাইম-টেবল নাই, কখন পানিভর্তি গাড়ি গেল, কখন পানি ছিটালো কোনো স্টেটমেন্ট নাই। ’
এ সময় রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতে সিটি করপোরেশনের দেওয়া হলফনামায় অথরাইজেশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মনজিল মোরসেদ বলেন, গত তারিখে তারা একটা হলফনামা দিয়েছে। সেই হলফনামা তো আপনারা গ্রহণ না করে বলেছিলেন ডকুমেন্টসহ হলফনামা দিতে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দিয়ে তো তিনি আজকের হলফনামা করতে পারেন না। আজ যারা আদালতে হাজির হলেন, উনাদের কি একটা রেসপন্সসিবিলিটি নাই? চিফ অ্যাক্সিকিউটিভ অফিসার এই রিট পিটিশনের বিবাদী। উনারা তো সই করেন নাই।
এরপর আদালত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হচ্ছে- প্রোপারলি পানি ছিটানো হচ্ছে না। আপনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, শোনেন, আপনাদের কনসাস থাকতে হবে। যেহেতু আপনাদের বিবাদী করা হয়েছে, যদি এ ব্যাপারে যথাযথ কোনো নির্দেশনা না থাকে তাহলে একটা আদেশ হলে তখন কিন্তু সমস্যা হবে। আপনারা হলফনামা করে আদেশ বাস্তবায়ন করেন। ’
আদালত আরও বলেন, আপনাদের যেহেতু পানি ছিটানোর কাজ তাই এই কাজটা প্রোপারলি হচ্ছে কিনা সেটা আপনাদেরই মনিটর করতে হবে। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে দুইবার কোথায়, কোনো জায়গায় পানি ছিটাতে হবে সেটা আপনাদের দেখতে হবে। এ বিষয়ে ডিটেইলস আপনাদের দিতে হবে।
আদালত বলেন, আপনাদের ম্যানহোল থাকে না। একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় পানি হাঁটুর উপরে চলে যায়। ঢাকা সিটি পুরোনো একটা সিটি। তারপরও যদি আপনারা এসবের ব্যবস্থা না করতে পারেন, এগুলো সবই কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জলাবদ্ধতা থেকে আরম্ভ করে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি ছিটানো সবই।
সামগ্রিক বিষয়ে নির্বাহী কর্মতাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আদালত বলেন, আপনাদের মায়া থাকা উচিৎ। আপনার প্রজন্মের জন্যেই দরকার। ভবিষ্যত প্রজন্ম মানে আপনার প্রজন্ম। তাদের জন্য ঢাকা শহরটাকে বসবাস উপযোগী রাখা। এর জন্য যদি এক্সট্রা পরিশ্রমও করতে তা করে যেকোনোভাবে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করেবন ।
‘আরেকটা বিষয়। পাবলিক ইন্টারেস্টের বিষয়। এই যে বর্ষার সিজন আসছে, আপনারা যদি এখনই স্টেপ না নেন তাহলে কিন্তু ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় মানুষ আক্রান্ত হবে। এই বিষয়গুলো আপনারা ভালোভাবে দেখবেন। আগে থেকেই পদক্ষেপ নিবেন। ২০ তলার উপরেও মশা। এখন থেকেই যদি শুরু না করেন এই সিজনে আরো বাড়বে কিন্তু। ’
পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাইকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনি তো শুনছেনই কি বলা হয়েছে, ... এগুলো দেখবেন কারণ, এখানে বিদেশি দূতাবাস আছে। মশার বিষয়টি দেখবেন। আর আপনারা তো বিদেশে যান ঘন ঘন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর তো সমুদ্রের মধ্যে দ্বীপ। তারা কত ডিসিপ্লিন এবং রাস্তাঘাট কত পরিষ্কার। আমাদের রাজধানী শহর, এখানে বিদেশিরা আসে, দেখে। যতটুকু দায়িত্ব আছে, বাজেট আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। সাবেক মেয়র আনিসুল হক অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। আশা করি বর্তমান মেয়র সেগুলো এগিয়ে নিবেন। ’
আদালত আরও বলেন, আপনাদের এরপর আর আসার দরকার নাই। তবে আপনাদের অথরাইজইড পারসন দিয়ে আপনাদের পক্ষে হলফনামা করাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯
ইএস/এমএ